ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিস্তৃত পরিসরে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাত থেকে বিমান হামলা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থল হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে গাজার টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্তমানে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডটি পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আল জাজিরার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় গাজায় অবিরাম বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিনিধি সাফওয়াত আল-কাহলুত গাজা থেকে বলেন, ইসরায়েলি বোমা হামলা যে হারে বেড়েছে, তাতে মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি যোগাযোগ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে, আজ (শুক্রবার) রাতে বড় কিছু ঘটবে।
আরও পড়ুন: যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারে হামাস-ইসরায়েল: আল জাজিরা
Advertisement
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক মারওয়ান জিলানি অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা আগে গাজায় তাদের দলের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ হারিয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অ্যাকশনএইডও জানিয়েছে, তারা গাজায় কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে।
গাজার খান ইউনিস এলাকায় কর্মরত আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এখানকার ২৩ লাখ মানুষ বর্তমানে পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তারা আত্মীয় বা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
ফিলিস্তিন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি (প্যালটেল) ও ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লকস পৃথক বিবৃতিতে গাজায় তাদের নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কথা জানিয়েছে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসেফ জানিয়েছেন যে, তিনি গাজায় তার পরিবারের সদস্যদের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি ছাড়া জিম্মিদের মুক্তি দেবে না হামাস
Advertisement
এদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড বলছে, তারা বেইত হানুন ও বুরেজের পূর্বে ইসরায়েলি স্থল অনুপ্রবেশকে ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে সংঘর্ষ এখনো চলছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসামা হামদান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইসরায়েল বিজয়ের ছবি তৈরির চেষ্টা করছে। গাজা উপত্যকার সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা ইসরায়েলি দখলদারত্বের অপরাধগুলোকে কোনো তদারকি বা জবাবদিহিতা ছাড়াই ধামাচাপা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
এদিকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে যে, গাজায় তাদের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। বিবিসির প্রতিনিধিরা বলছেন, আগের তুলনায় সেখানে আরও ভারি বোমা বর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল। বেশির ভাগ বোমা হামলা চালানো হচ্ছে বিমান থেকে। এর পাশাপাশি শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাত থেকেই ইসরায়েলি স্থলবাহিনী গাজায় বিস্তৃত পরিসরে অভিযানে নেমেছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে আবারও রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা গাজায় হামলার মাত্রা বাড়িয়েছি। বিমান বাহিনী মাটির নিচের নিশানা ও সন্ত্রাসী অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক বোমাবর্ষণ করছে। গত কয়েকদিন ধরে আমাদের চলমান এই আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে স্থলবাহিনীও শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে স্থলভাগে অভিযান শুরু করছে।
হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী চারদিক থেকে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে কাজ করছে বলে জানান হ্যাগারি। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিবিসির এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইসরায়েল স্পষ্টতই গাজায় তাদের তৎপরতা বাড়াচ্ছে। এতে সন্দেহাতীতভাবে আরও বেশি মানুষ মারা পড়বে।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
তিন সপ্তাহ ধরে গাজায় ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু ৬৬ শতাংশ।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স
এসএএইচ