জাতীয়

২৮ অক্টোবরও কি নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেটে গতি কম থাকবে?

রাজপথ দখলের ‘চূড়ান্ত’ লড়াইয়ে বিএনপি। যা রুখে দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন পর বড় দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান। এবার ডেটলাইন ২৮ অক্টোবর। দিনটি ঘিরে দেশবাসীর মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিএনপি-আওয়ামী লীগের এ ‘লড়াইয়ে’ এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার যেন তথ্যপ্রযুক্তি। দলীয় কর্মীদের তথ্য ও নির্দেশনা দেওয়া থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে এখন ভরসা মোবাইল ও ইন্টারনেট। গণমাধ্যমে কতটুকু দলীয় কর্মসূচির প্রচার পাবে—তার আশায়ও থাকেন না কেউই। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখানো হয় সমাবেশের লাইভ।

Advertisement

তবে সমাবেশের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) মহাখালীতে অবস্থিত ঢাকার সবচেয়ে বড় ডাটা হাব খাজা টাওয়ারে আগুন লাগে। এতে ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই সারাদেশ ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। ইন্টারনেটের গতি সহসাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ২৮ অক্টোবরও ঢাকাসহ সারাদেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি থাকতে পারে। মোবাইল নেটওয়ার্কেও বিভ্রাট দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চান ইন্টারনেট সেবাদাতারা

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সমাবেশের দুদিন আগেই সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়। এবার আগুনের অজুহাতে শনিবারও (২৮ অক্টোবর) ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেবে। এগুলো করে সরকার মহাসমাবেশ রুখে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

Advertisement

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সমাবেশ ঘিরে নেটওয়ার্কে জ্যামার বসানো, ইন্টারনেট স্লো করে দেওয়া—এগুলো তো নতুন কিছু নয়। সবসময় সরকার ও তাদের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব করে আসছে। এবার আগুন লাগার দোহাই দিয়ে সেটা জায়েজ করার চেষ্টা হচ্ছে।

মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো বলছে, শুধু রাজধানী নয়, দেশের কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেটের গতি কমানো এবং নেটওয়ার্ক জ্যাম করে রাখার এখতিয়ার অপারেটর কোম্পানির নেই। এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চাইলে করতে পারে।

আরও পড়ুন: সমাবেশ নয়াপল্টনে, বাধা দিলে সরকারকে দায় নিতে হবে: ফখরুল

দেশের বড় একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান নাম অপ্রকাশিত রেখে জাগো নিউজকে বলেন, জ্যামার বসিয়ে কোনো সংস্থা বা কেউ সাময়িক সময়ের জন্য নেটওয়ার্ক বিভ্রাট ঘটাতে পারে। নেটওয়ার্ক বিভ্রাট ঘটলে ইন্টারনেটও পাওয়া যাবে না। আমরা চেষ্টা করি—দ্রুত যেন সেখানে পুরোদমে নেটওয়ার্ক ও সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়। তবে সবকিছু তো হাতে থাকে না। কিছু ঘটনা আমাদের আওতার বাইরে থাকে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, একটা ব্যাপার আপনাকে জানিয়ে রাখি- যখন কোনো এলাকায় জনসমাগম বেশি থাকে, তখন আমরা সেখানে নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারি। কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো হাত থাকে না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, জনস্বার্থে ‘উসকানি ও সহিংসতা’ রুখতে অনেক সময় ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্ক সীমিত করা হয়। এবার এখনো এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা তারা পাননি।

আরও পড়ুন: অপরাধী চক্রের কাছে জ্যামার-নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রি করতেন তারা

বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের একজন উপ-পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ করা বা মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যাম করা নিয়ে কখনই আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয় না। অনেক সময় পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু কাজ করা হয়। এবার সেসব নিয়ে আমাদের কোনো সহায়তা সরকারের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়নি।’

জানতে চাইলে ইন্টারনেট প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের কথা এখন বলা ঠিক হবে না। তবে এবার তো আমরা একটা বিপর্যয়ে পড়েছি। আপাতত যে অবস্থায় আছি, তাতে ইন্টারনেটের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ইন্টারনেট পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দুই থেকে তিনদিন সময় লেগে যেতে পারে।’

এএএইচ/জেডএইচ/জেআইএম