কবি বলেছেন, ‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’। মহালয়া থেকে দশমী টানা দশ দিনের সফর শেষে কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। ভক্তকূলে তাই বেদনার ঘনঘটা। ‘অশুভ শক্তির বিনাশ আর শুভ শক্তির বার্তা নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারো মা এসেছিলেন। উৎসবে মেতে ছিলাম আমরা। বিদায়ে তাই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’ এভাবেই অশ্রুসিক্ত নয়নে কথাগুলো বলছিলেন দেবীভক্ত পলাশ রায়।
Advertisement
যদিও মহালয়া দিয়ে উৎসবের শুরু কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার মাত্রা যোগ হয় ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে। মূল পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের শেষদিন ছিল ২৪ অক্টোবর। এই দিন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গােৎসব।
বিজয়া দশমীর ক্ষণে দেবীকে বিদায় জানাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন দেবী দুর্গার ভক্তরা। এদিন যেন আকাশে-বাতাসে বিষাদ ছড়িয়ে পড়ে। ভক্তের চোখে অশ্রু যেন জানান দেয় মাকে বিদায় দিতে মন চাইছে না। মন্দিরে মন্দিরে চলে তেল-সিঁধুরের খেলা। দেবীকে ভক্তিভরে এ বছরের মতো শেষ দেখা দেখতে মন্দিরগুলোতে ভিড় করেছেন ভক্তরা।
আরও পড়ুন: ‘অশ্বত্থামা হত ইতি গজ’ কথকঠাকুরদের তৈরি
Advertisement
অকালবোধন দেবী দুর্গা এ বছর এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে। গিয়েছেনও ঘোড়ায় চড়ে। ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী শেষে দেবীর বিদায়ের পালা আসে। দশমীর ক্ষণে দেবী মর্ত ছেড়ে পাড়ি জমান কৈলাসের উদ্দেশ্যে। বাপের বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে। সাথে থাকেন তার সঙ্গীরাও। ঢাক, ঢোল, কাঁশর, ধুপ-ধুনো আর উলুধ্বনিতে মুখরিত ছিল মন্দির প্রাঙ্গণ। টানা পাঁচদিন ছিল উৎসবের আমেজ। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মেতেছিলেন উৎসবে।
পণ্ডিত শ্রী শংকর চক্রবর্তী (সপ্ততীর্থ প্রথম শ্রেণিতে উপাধিপ্রাপ্ত) বলেন, ‘বছর ঘুরে আবার আসুক মা। সব অপশক্তির বিনাশ হোক। মা মঙ্গল করুক ধরণীর। হানাহানি ভুলে আমরা একটি শান্তির পৃথিবী চাই। বিদায়ে মায়ের কাছে এটাই প্রার্থনা।’
কড়ৈতলী শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের সাবেক সভাপতি সমরেন্দ্র মিত্র বলেন, ‘মা প্রতিবারের মতো পৃথিবীতে এসেছেন। সব অপশক্তিকে দূর করে পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে মায়ের আশীর্বাদের বিকল্প নেই। ভক্ত হিসেবে মায়ের কাছে চাওয়া, তিনি যেন তার সব সৃষ্টিকে পুণ্যের বাঁধনে বেঁধে রাখেন।’
আরও পড়ুন: আজ বিজয়া দশমী, বিকেলে দেবী বিসর্জন
Advertisement
সম্পা দত্ত বলেন, ‘মা এলেই উৎসবের আমেজ ফিরে পাই। ঢাক, ঢোল আর কাঁশির বাজনায় হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। মন্দিরে মন্দিরে চলে আরাধনা। বাঙালি সনাতনীদের ঘরে ঘরে চলে উৎসব। যদিও বলা হয়, ঘোড়ায় চড়ে দেবীর মর্তে আসাটা অশুভ। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, পুত্র কুপুত্র হলেও মাতা কুমাতা হন না। মা কখনোই সন্তানদের বিপদে ফেলবেন না।’
বছর ঘুরে আবার আসুক মা। হানাহানি, মারামারি ভুলে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হোক। তাই তো দেবীভক্তরা মন্ত্রে উচ্চারিত করলেন, ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতুরূপেণ সংস্থিতা/ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।’
এসইউ/জিকেএস