দেশজুড়ে

কক্সবাজারে খোলা হয়েছে ৫৭৬ আশ্রয়কেন্দ্র, সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড়

উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে একই এলাকায় রয়েছে। এটি মঙ্গলবার (অক্টোবর) সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি রাতের মাঝে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে কক্সবাজারেও ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

Advertisement

এটি উপকূল অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপকূল এবং প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আরও পড়ুন: আরও দুর্বল ‘হামুন’, চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু

মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ১২ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে একই এলাকায় রয়েছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি সন্ধ্যা থেকে রাতের মাঝে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

Advertisement

এটি মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ কিলোমিটার যা, দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় এলাকার নিকটবর্তী সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সভায় ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৫৭৬টি সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার জন্য নগদ টাকা, ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধও সরবরাহও করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে কক্সবাজারের উঁচু উঁচু ভবন (বিশেষ করে হোটেল-মোটেল) আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, হামুনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে খোলা হয়েছে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’। এডিসি জেনারেলের তত্ত্বাবধানে কমিটিতে এনডিসিকে সমন্বয়ক রাখা হয়েছে। কমিটিতে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের নিয়ে ২৪ অক্টোবর দুপুর ১২টা থেকে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঝুঁকি বেড়েছে চট্টগ্রামে, কমেছে বরিশাল-খুলনায়

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টিম, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করছে। সবখানে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার ৯ উপজেলায় ১৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মজুত রয়েছে নগদ টাকা ও শুকনো খাবার।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সোমবার রাত থেকেই কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রথমে হালকা বৃষ্টি হলেও মঙ্গলবার দুপুর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বিকেলের পর টেকনাফের সেন্টমার্টিনসহ উপকূলে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয় বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও সাগরপাড়ে ভিড় করে উৎসুক মানুষ। মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টিস্নাত সৈকত এলাকার ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন অনেকে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় সমুদ্র উপভোগ করছেন পর্যটকরা। তবে সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহিত করে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছিল বার বার।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হলে আমরা দ্বীপের সব জায়গায় মাইকিং করে সর্তক করেছি। দ্বীপে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস বইছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আসায় সাগরে ঢেউ আগের তুলনায় বাড়ছে। দ্বীপের জেটিঘাটের পাশে থাকা একটি ঝাউগাছ বাতাসে ভেঙে পড়েছে। অন্য এলাকাতেও কিছু গাছপালা পড়ে যাওয়ার খবর শুনেছি।

আরও পড়ুন: হামুন’র প্রভাবে সেন্টমার্টিনে ভারী বৃষ্টি, বেড়েছে সমুদ্রের পানি

এদিকে, সোমবার ৩ নম্বর সর্তক সংকেত জারির পর সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব নৌ-যান চলাচল বন্ধের নির্দেশনায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ পর্যটক ওইদিন ফেরত আসেন। তবে শতাধিক পর্যটক দ্বীপে থেকে যান।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল ও বড় ঢেউ হচ্ছে। এ অবস্থায় সাগরে গোসল করা নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের সাগরে গোসল করতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের উপকূলে থাকা সাইক্লোন শেল্টারে সোয়া ৫ লাখ লোক ধারণক্ষমতা রয়েছে। যে কোনো দুর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই এগিয়ে এলে তা মোকাবিলা সহজ হয়। অতীতের মতো এবারও আমরা সফল হবো।

সায়ীদ আলমগীর/এমআরআর/এএসএম