জাতীয়

ট্রেনে মটমট শব্দ শুনে লাফিয়ে বাঁচেন নাসির-বাহারুল

বাহারুল ইসলাম একজন রেলকর্মী। এর আগেও তিনি ট্রেন দুর্ঘটনা দেখেছেন। একবার তো দুর্ঘটনায় গাছের ওপরে মানুষকে ঝুলতে দেখেন। তবে তার জীবনকে দুঃসহ করে তোলে ভৈরবের ট্রেন দুর্ঘটনা। যদিও তিনি সেই ভয়াবহ ঘটনায় আর বাকিদের মতো মারা যাননি। বেঁচে ফিরেছেন। তবে তার দুটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

Advertisement

সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাহারুল জানান, পুরোনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বেঁচে ফিরেছেন। তবে তার এক পা ফ্রাকচার হয়ে গেছে। মচকে গেছে অন্য পা। তার ডান পায়ে অস্ত্রোপচার লাগবে।

বাহারুল রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর) ভর্তি আছেন। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে তাকে নিটোরে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে ক্ষতবিক্ষত লাশ আর আহাজারি’

Advertisement

বাহারুল নোয়াখালী সোনাইমুড়ীর ওয়াসেকপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২১ বছর ধরে ট্রেনে কাজ করেন। এগারোসিন্দুর গোধূলি ট্রেনে এটেন্ডেন্স হিসেবে দুই বছর কাজ করেছেন।

ভৈরবের ঘটনার বিষয়ে বাহারুল জাগো নিউজকে বলেন, যখন ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে, অন্য বগিতে মটমট শব্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার সঙ্গে থাকা অন্য এটেন্ডেন্স নাসিরকে বলি, ‘আজকে শেষ, লাফ দে।’ এরপর দুজনই একসঙ্গে লাফ দেই। লাফ দেওয়ার পর বগি যখন আমাদের গায়ে আসতে পারে এমন অবস্থা দেখি, তখন গড়াগড়ি দিয়ে বনের দিকে চলে যাই। লাফ দিয়ে বাড়ি খেয়ে পায়ের এই অবস্থা হয়েছে।

এরপর থেকে জ্ঞান ছিল না বলে জানান বাহারুল। যখন ভৈরব হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন তার জ্ঞান ফেরে।

আরও পড়ুন: ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনজনকে বরখাস্ত

Advertisement

তিনি বলেন, ভৈরবের এক পরিচিত দোকানদার আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গে নাসিরও ছিলেন। আমাদের দুজনকেই অ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। নাসির প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে গেছেন।

এগারোসিন্দুর যে বগিতে তিনি ছিলেন তার ধারণ ক্ষমতা ছিল ৬০ জনের। এরপর অতিরিক্ত আরও ১৫-১৬ জন ছিল বগিতে।

তিনি অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, এর আগে আরও অনেক বড় দুর্ঘটনা দেখেছি। এ জন্য পুরোনো অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে।

বাহারুলকে ঢাকায় নিটোরে নিয়ে আসার পর থেকে তার দেখাশোনা করছেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রেনে আমিও দায়িত্ব পালন করি। ছুটিতে থাকায় দুর্ঘটনায় পড়িনি।

আরও পড়ুন: ভৈরবে এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৬৫ জনের মৃত্যু

এর আগে সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একই সময় ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারোসিন্ধুর। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে বগি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে একদিনেই ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।

এএএম/জেডএইচ/এএসএম