খেলাধুলা

ফিরে দেখা : কেমন ছিল বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ মিশন?

বাংলাদেশের বিশ্ব টি-টোয়েন্টির যাত্রা শুরু হয়েছিল মার্চের ৯ তারিখে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এশিয়া কাপের সূচির সাথে সামঞ্জস্য না থাকায় টুর্নামেন্টের একমাত্র দল হিসেবে কোন প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেই সরাসরি খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। ধর্মশালায় সে ম্যাচে ১৫৩ রানের পুঁজি নিয়েও টাইগাররা ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল ৮ রানে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টির গত আসরে সুপার টেনেও খেলেছিল নেদারল্যান্ডস, তাই তাদের সহজ প্রতিপক্ষ ভাবার উপায় ছিল না। কিন্তু তাদের বিপক্ষে জিতে বিশ্বকাপে নিজদেরে শুভ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। ৫৮ বলে ৮৩ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তামিম ইকবাল।এর পরের ম্যাচটি ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ১১ তারিখে। এই আয়ারল্যান্ডের কাছেই ২০০৯ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তাই সতর্কতার কমতি ছিল না তাদের বিপক্ষেও। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলা মাঠে গড়াতে পেরেছিল মাত্র ৮ ওভার। কিন্তু সেই ৮ ওভারে ৯৪ রান তুলে নিজেদের সামর্থ্যটা বুঝিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।দুই খেলায় দু’দলেরই ৩ পয়েন্ট থাকায় ওমানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেটি হয়ে ওঠে সুপার টেনে যাওয়ার অলিখিত ফাইনাল। ১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ওমানকে ৫৪ রানে হারিয়ে সুপার টেনে উঠে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শতরান করে আবারও ম্যাচসেরা হন তামিম ইকবাল। পাশাপাশি বোলিংয়ে সাকিব পেয়েছিলেন ৪ উইকেট।সুপার টেনে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটি ছিল ১৬ তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। এদিন তেমন ভাল হয়নি বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। আগে ব্যাটিং করে আফ্রিদি ঝড়ে ২০১ রানের বড় স্কোর গড়ায় ম্যাচটি তখনই হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। অতঃপর বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায় ৫৫ রানে, যদিও কিছুদিন আগেই এশিয়া কাপে এই পাকিস্তানকেই হারিয়েছিল বাংলাদেশ।৪ দিনের বিরতি দিয়ে ব্যাঙ্গালুরুরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। তবে এর মধ্যেই বিস্ময়করভাবে তাসকিন ও সানির বোলিং সাময়িক নিষিদ্ধ হওয়ায় দলের মনোবল অনেকটাই ভেঙ্গে যায়। পুরোপুরি ফিট না থাকলেও ইনজুরি কাটিয়ে ফিরতে হয় মুস্তাফিজকে। তবে ১৫৬ রানের মোটামুটি মানের পুঁজি নিয়েও ২১ তারিখের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ লড়াই করে বাংলাদেশ। এই রান করতেই অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট পড়ে যায়, তাসকিনের-সানির অভাবটা ভালোভাবেই বোধ করে বাংলাদেশ।২৩ তারিখে ওই একই মাঠে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল জবাব দেওয়ার লড়াই। টানা ৭ ম্যাচ পরে সেদিন টসে জিতেন মাশরাফি। আগে ব্যাট করে ভারত মাত্র ১৪৬ রান করতে সক্ষম হয়। জবাবে ম্যাচের পুরোটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেও শেষ তিন বলে দুই রান নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ভাগ্যের এক নির্মম পরিহাসে বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায় মাত্র এক রানে। হয়তো সেভাবে জবাব দেওয়া হয়নি, তবে এই ম্যাচটিই এখন পর্যন্ত এবারের আসরের সেরা ম্যাচ হিসেবে আখ্যায়িত হয়।দুর্ভাগ্যজনকভাবে হারের পর আবারও ইডেনে গ্রুপ-২ এর অপরাজিত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলে ২৬ তারিখ। মুস্তাফিজের এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরা বোলিং ফিগারে (৫/২২) প্রথমে ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ড করেছিল ১৪৫। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে মাঝ পথে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ, নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোর ৭০ রানে অল-আউট হয়ে ম্যাচটি হেরে যায় ৭৫ রানের বড় ব্যবধানে। শেষ ম্যাচেও কিছু বাজে আম্পায়ারিং এর শিকার হয় বাংলাদেশ।পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই বাংলাদেশকে ঘিরে আইসিসির বিমাতা সুলভ আচরণ নিয়ে বিতর্ক ছিল। তাসকিন-সানির আপাত নিষিদ্ধের বিষয়টা পুরো দলের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছিল। এক রকম অদ্ভুত মন খারাপ করা পরিস্থিতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনটা শেষ হলেও প্রাপ্তি আছে অনেক। তামিমের শতরান, মুস্তাফিজের টুর্নামেন্ট সেরা বোলিং, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভাঙ্গা মনোবল নিয়েও প্রাণপণ লড়াই, সেই প্রাপ্তির কিছু খন্ডচিত্র। যদিও দুর্বলতাও আছে কিছু ক্ষেত্রে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ও ফিল্ডিং মিস, সুপার টেনে ব্যাটসম্যানদের বড় রান না পাওয়ার পাশাপাশি দল নির্বাচন নিয়েও আছে অসন্তোষ। নাসিরকে বসিয়ে রেখে মিথুনকে ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ দেওয়াটা কতখানি যৌক্তিক সে নিয়েও আছে বিতর্ক। তবে অধিনায়ক মাশরাফি এত কিছুর পরেও আজ বাংলাদেশে এসেই দলের ইতিবাচক দিকগুলোর কথাই তুলে ধরলেন। আমরাও না হয় সেদিকেই তাকিয়ে থাকি। বোলিংয়ে তাসকিন-সানির ফিরে আসার পাশাপাশি নিজেদের ছোট-খাট ভুলগুলোও শুধরে নিক বাংলাদেশ, এগিয়ে যাক দূর থেকে আরও বহু দূরে!লেখক পরিচিতি : কম্পিউটার প্রকৌশলীএমআর/আরআইপি

Advertisement