আন্তর্জাতিক

হঠাৎ কেন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজাহাজ পাঠালো চীন?

হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে ছয়টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চীন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান ও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন প্রকাশে এমনটি করেছে তারা। তবে সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বেইজিং জানিয়েছে, নিয়মিত টহল ও প্রীতি সফরের অংশ হিসেবেই মধ্যপ্রাচ্যে এসব যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে তারা। এর সঙ্গে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।

Advertisement

চীনা সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমের মতে, গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার জিবো, গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট জিংঝু ও কৌশলগত সহায়ক জাহাজ কিয়ানদাওহু- এই তিনটি যুদ্ধজাহাজের সমন্বয়ে গঠিত ৪৪তম নৌবহর গত ১৮ অক্টোবর কুয়েতের সুয়াইখ বন্দরে পৌঁছায়।

আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় সব করতে প্রস্তুত চীন

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নৌবাহিনী আগেই জানিয়েছিল, গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার উরুমকি, গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট লিনি ও কৌশলগত সহায়ক জাহাজ ডংপিংহু’র সমন্বয়ে গঠিত ৪৫তম চীনা নৌবহর এডেন উপসাগর ও সোমালিয়ার জলসীমায় ৪৪তম নৌবহরের সঙ্গে টহল অভিযানে অংশ নেবে।

Advertisement

বেইজিংয়ের দাবি, বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম ব্যাপক গুজব ছড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে, ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গু পশ্চিমাদের এমন দাবি প্রত্যাখান করেছেন।

আরও পড়ুন: স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কি আর সম্ভব হবে?

রোববার (২২ অক্টোবর) রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিউ পেঙ্গু বলেন, পিএলএ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের ওই বহর একটি নিয়মিত টহল মিশনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যাত্রা করেছে ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বন্ধুত্বপূর্ণ সফর করছে। এই সত্যকে শ্রদ্ধা দেখানোর পাশাপাশি সব পক্ষকে ভিত্তিহীন প্রচার বন্ধ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি গণমাধ্যম ও পশ্চিমা রাজনীতিকরা প্রথমে ইসরায়েলকে সমর্থন না দেওয়ার কারণে চীনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আর এখন তারা এই অঞ্চলে আমাদের নিয়মিত সামরিক টহল মিশন নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। এটা চীনকে সংঘাতে জড়িয়ে ফেলার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই না।

Advertisement

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা বহরটি কাজে লাগাতে পারবে চীন। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের শুরুতে সুদানে সংঘাত শুরু হলে চীনা নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে চীনা নৌবহর বেশ সহায়ক হয়েছিল।

আরও পড়ুন: চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ব্যাপকভাবে বেড়েছে: যুক্তরাষ্ট্র

সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডিং লং গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, আন্তর্জাতিক বিরোধ সমাধানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীন কখনোই সামরিক হস্তক্ষেপ বেছে নেবে না।

আসলে গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের ফলে গোটা বিশ্ব কার্যত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদিকে, ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। অন্যদিকে, হামাস তথা নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে চীন ও রাশিয়া।

আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাসের সংঘাত/ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালো চীন

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক অভিযানের পর নতুন করে ফিলিস্তিন-সংঘাত শুরু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। যে হামলা এরই মধ্যে কয়েক হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করেছে এবং পাঁচ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

সূত্র: গ্লোবাল টাইমস

এসএএইচ