‘ভয়াবহ এমন ট্রেন দুর্ঘটনা আগে দেখেনি কিশোরগঞ্জের ভৈরববাসী। জন্মের পর থেকে বাড়ির পাশ দিয়ে ট্রেন চলাচল করে দেখে আসছি। কিন্তু কোনোদিনই এমন দুর্ঘটনা দেখিনি, যা দেখে হৃদয় কেঁপে উঠেছে। কত মানুষ যে আহত এবং মারা গেছে হিসাব নাই।’
Advertisement
সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারো সিন্ধুর ট্রেনের পেছনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনের ধাক্কার ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দা ফজলু মিয়া।
স্থানীয়রা জানান, স্টেশনমাস্টারের ভুলের কারণেই এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্টেশনমাস্টার একটু পর মালবাহী ট্রেনকে স্টেশনে ঢোকার সংকেত দিলেই এমনটা ঘটতো না।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলিম হোসেন শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল, আর যাত্রীবাহী ট্রেনটি যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকায়। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের পেছনে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কা লাগে। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিক হতাহতদের উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে এসে যোগ দেয় প্রশাসনের লোকজন।
Advertisement
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ১১
ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এরআগে সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একইসময় ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারো সিন্ধুর। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়। তাৎক্ষণিক ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আরও দুজনের মরদেহ পাওয়া যায়। আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
Advertisement
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের নিচে এখনো অনেকের মরদেহ চাপা পড়ে আছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অন্ধকারে কারণে উদ্ধার অভিযান চালাতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে নিহত ও আহতদের উদ্ধার কাজ চলছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঢাকা থেকে একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন ভৈরব স্টেশনে প্রবেশ করছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারসিন্ধুর ট্রেন ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল। জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং এলাকায় এগারসিন্ধুর ট্রেনের শেষের দু-তিনটি বগিতে কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। মূলত সিগনালিংয়ের কোনো জটিলতায় এমনটা ঘটেছে।
এসকে রাসেল/এসজে/এএসএম