জাতীয়

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ইসিতে মতানৈক্য

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে করতে তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আর ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে ভোট।

Advertisement

কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যম সম্পাদকদের কাছে ‘নেতিবাচক ধারণাপত্র’ পাঠিয়েছেন। তবে সিইসির ‘নেতিবাচক ধারণাপত্রে’র বিরুদ্ধে মতামত জানিয়েছেন ইসির একাধিক কমিশনার। ফলে বিষয়টি নিয়ে ইসিতে দেখা দিয়েছে মতানৈক্য।

আরও পড়ুন: জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারলেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য: সিইসি

অন্য কমিশনাররা বলছেন, সিইসির ধারণাপত্রের ওই মূল্যায়ন একান্তই ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য নির্বাচন কমিশনাররা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং তারা সিইসির মূল্যায়নের সঙ্গে একমতও নন।

Advertisement

এর আগে রোববার নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান এক গণমাধ্যমকে বলেন, ধারণাপত্রটি সিইসি নিজেই লেখেন। এতে তার ব্যক্তিগত মত প্রতিফলিত হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে আমার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। অথচ আমি নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরেরও মতামত নেওয়া হয়নি। কমিশনে এটি নিয়ে আলোচনাও হয়নি। আমরা গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি জেনেছি। ওই ধারণাপত্রে যা বলা হয়েছে, তা সিইসির ব্যক্তিগত মতামত। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য নয়।

আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর নির্ভর করতে হবে: সিইসি

বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার এক কমিশনার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, আমার মতে, ভোটের পরিবেশ ভালো আছে। আমি কোনো সমস্যা দেখি না। মানুষ জানতে চায় কবে ভোট হবে। বিগত যেসব ভোট করলাম কোথাও কোনো মারামারি ছিল না। সিইসি যে ধারণাপত্র দিয়েছেন তা আমি দেখিনি। এটা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আগের যে সংলাপ ছিল সেই ধারণাপত্র দেখেছি। কিন্তু সদ্য পত্রিকায় প্রকাশিত ধারণাপত্র দেখি নাই। সিইসি সম্পাদকের কাছে দিয়ে যেটা ছাপিয়েছেন ওইটা দেখিনি। এটা যেহেতু দেখিনি সুতরাং জানি না। এ ব্যাপারে কোনো মিটিং হয়নি। মিটিং হলে তো আমি জানতাম। আমি ভোটের কোনো খারাপ পরিবেশ দেখছি না। আমরা অনেক ভোট করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখেছি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ধারণাপত্রে উল্লেখ করেছেন। চারজন নির্বাচন কমিশনার কিছু জানে না এটাও উল্লেখ করেছে পত্রিকা। চারজন জানে না কি সেটা আমিও জানি না। তবে এ বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল কমেন্ট দেবো না। এ বিষয়ে কথা বলবেন ইসি সচিব।

Advertisement

আরও পড়ুন: নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল

এর আগে গত বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলম সই করা চিঠিতে এক কর্মশালায় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২৬ অক্টোবর নির্বাচন ভবনে ‘গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ কর্মশালা হওয়ার কথা রয়েছে।

ওই চিঠির সঙ্গে কর্মশালায় আলোচনার জন্য দুই পৃষ্ঠার ধারণাপত্র পাঠানো হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়- বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব, সীমাবদ্ধতা, গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি এসব বিষয়।

ধারণাপত্রে যা লেখা ছিল

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের কাছে পাঠানো সিইসির আলোচিত ধারণাপত্রে বলা হয়, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা এখনো হয়ে ওঠেনি। প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো স্ব স্ব সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না। বিষয়টি রাজনৈতিক। নির্বাচন কমিশনের এক্ষেত্রে করণীয় কিছু নেই। নির্বাচন বিষয়ে দেশে পর্যাপ্ত আইন আছে। তবে আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমান্তরাল মিথষ্ক্রিয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আইনের বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হয় না।

আরও বলা হয়, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, মতানৈক্য ও সংকট হতেই পারে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা অন্বেষণ করা হলে তা অধিকতর ফলদায়ক হতে পারে। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নিয়ামক। কমিশন গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে না। নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। তবে নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

এমওএস/জেডএইচ/এএসএম