বাংলাদেশে শিশুদের খেলনায় সীসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়ামসহ বিষাক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এসব ক্ষতিকর ধাতু বেশি পাওয়া গেছে চীন থেকে আমদানি করা খেলনায়। এছাড়া দেশের ছোট ছোট কারখানায় নিম্নমানের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি খেলনায় মিলেছে। যা শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। শিশুরা যখন খেলনা হাতে নেয় বা মুখে দেয়, তখনই বিষাক্ত কেমিকেলের সংস্পর্শে আসে তারা।
Advertisement
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের করা (এসডো) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনের নাম- ‘ইনোসেন্স টাচড বাই শ্যাডোস: ইনভেস্টিগেটিং টক্সিক কেমিকেলস ইন টয়স’। সোমবার এসডোর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন শ্রেণির ৪০টি খেলনা পরীক্ষা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এরমধ্যে খেলনার প্রায় ৮০ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করা। এছাড়া ভিয়েতনাম ও ব্রাজিলের খেলনা রয়েছে। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত ছোট ছোট কারখানার খেলনা নেওয়া হয়েছে। যাতেও ক্ষতিকর ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের খেলনার মধ্যে বিপজ্জনক ভারী ধাতু, বিশেষ করে সীসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি প্রকাশ করা হয়েছে। এ খেলনাগুলোতে পাওয়া গড় ঘনত্ব নিম্নরূপ-
Advertisement
লেড- ৬৫.৮৫ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় ৫ গুণ বেশি। এছাড়া পারদ- ৩০.৬ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় ৪ গুণের বেশি এবং ক্যাডমিয়াম-২৮.৬৫ পিপিএম, যা নির্ধারিত প্রায় ১৫ গুণের বেশি।
ক্যাডমিয়াম একটি ভারী ধাতু। এটি নরম এবং দেখতে রুপালি সাদা। রাসায়নিক ধর্মে দস্তা ও পারদের সঙ্গে মিল রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শিশুদের খেলনায় সীসার উপস্থিতি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। যা খুবই উদ্বেগজনক। শিশুদের খেলনা উৎপাদন, বিতরণ এবং ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের সীসা দূষণকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। এই পণ্যগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ কি না তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, দেশে খেলনার উপকরণ ব্যবহারের একটি স্ট্যান্ডার্ড করতে হবে। এছাড়া নিম্নমানের খেলনা উৎপাদন বন্ধ করা এবং আমদানি খেলনাগুলো পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
Advertisement
সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ আরও বলেন, ভারী ধাতুর উপস্থিতি প্রত্যেকের জন্য ক্ষতিকারক, তবে এটি ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুরা খেলনা হাতে এবং মুখে দেওয়ার ফলে সেখান থেকে বিষাক্ত কেমিকেলের সংস্পর্শে আসে, যা তাদের স্নায়বিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খেলনায় বিভিন্ন ভারী ধাতু ও কেমিকেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, খেলনায় ব্যবহৃত রং মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট। কাজেই, যত দ্রুত সম্ভব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে সীসার সুনির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। তা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগের প্রয়োজন।
এনএইচ/জেডএইচ/জেআইএম