বিনোদন

এখনো বাবার দেওয়া জামার সুবাস খোঁজেন চঞ্চল

দর্শকপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। কখনো ফিরে যান শৈশবে, কৈশোরে আবার কখনো তারুণ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার শারদীয় দুর্গাপূজায়ও তিনি ফিরে গেলেন তার শৈশব-কৈশোরে। স্মৃতিচারণায় ডুবে গেলেন বাবাকে নিয়ে।

Advertisement

চঞ্চল তার বাবার দেওয়া নতুন জামার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া স্মৃতিতে মিশে গেলেন। সেই স্মৃতিকথা লিখেছেন তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে।

স্ট্যাটাসে চঞ্চল লিখেছেন, শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ছোটবেলা থেকেই আমাদের গ্রামে এই দুর্গাপূজার আমেজ শুরু হতো এক মাস আগে থেকেই। পাল মশাইয়ের প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে দেবীর বিসর্জন পর্যন্ত, কী যে এক আনন্দ উৎসব। সারা বছর অপেক্ষা করতাম কবে আসবে এই উৎসব।

শরতের কাশফুলে সাদা হয়ে থাকতো পদ্মার চর। সবচেয়ে বড় লোভ, আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করতো নতুন পোশাক পাবার আশায়। সারা বছর তেমন নতুন পোশাক আমাদের কপালে জুটতো না। কঠিন দারিদ্র্যতার ভেতরেও পূজার সময় বাবা সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন সবগুলো ভাই-বোনকে নতুন কাপড় কিনে দেবার।

Advertisement

নতুন জামার স্মৃতিকথা বর্ণনা দিতে গিয়ে এ অভিনেতা লেখেন, সারা বছরে একমাত্র এ পূজাতেই আমাদের সৌভাগ্য হতো নতুন পোশাক পরার। ছিট কাপড় কিনে বাবা নিজে সাথে করে শার্টের মাপ দেয়ার জন্য নিতে যেতো দর্জির কাছে। প্রতিদিন দর্জির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম কাপড় কাটা হলো কিনা, শেলাই হলো কতটুকু, বোতাম লাগানো শেষ হলো কিনা দেখবার জন্য। আহারে! কত কত অপেক্ষা! যেদিন শার্টটা হাতে পেতাম, সে যে কি আনন্দ!

চঞ্চল তার শৈশবে পূজায় নতুন জামা পাওয়ার কথা প্রসঙ্গে লেখেন, নতুন জামার নতুন কাপড়ের আনন্দ, পূজার আনন্দ! নতুন কাপড়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম। এভাবেই কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। আস্তে আস্তে বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে সামর্থ পরিবারে, আমরা ভাইয়েরাও লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি যার যার মতো। বাবা-মায়ের নিদারুণ কষ্টের সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।

আরও পড়ুন: অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে এখনো জীবিত আমি: চঞ্চল চৌধুরী

এখন আমরা নিজেদের সন্তানসহ, আত্মীয় স্বজন অনেককেই পূজার সময় নতুন পোশাক কিনে দেই সাধ্যমতো। এখন আমার ঘর ভর্তি কত কত নতুন পোশাক! পোশাকগুলো পরার সময়ও পাই না ঠিকমত। এছাড়া প্রতিবছর পূজায় এখন আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব থেকেও অনেক নতুন পোশাক উপহার পাই। কিন্তু সেই পোশাকে কেন জানি সেই আগের নতুন গন্ধ পাইনা, যে গন্ধ পেতাম বাবার কিনে দেওয়া ছিট কাপড় থেকে বাজারের দর্জির বানানো শার্টে! যে গন্ধে বুদ হয়ে থাকতাম, ছিলাম বহু বছর।

Advertisement

মায়ের সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী

কিছুটা সামর্থ হবার পর থেকেই, প্রতিবছর পূজায় সবার আগে বাবা মায়ের জন্য নতুন পোশাক কেনা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে বড় প্রশান্তির, সবচেয়ে বড় আনন্দের অভ্যাস।

এবারও নিজে হাতে সবার জন্য নতুন কাপড় কেনার লিস্ট তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই বাবার নামটা লিখে ফেলেছি।

হঠাৎ মনে হলো, আরে! বাবা তো নেই! চুপ করে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। চোখের জল কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। গত বছর বাবা চলে গেছেন পরলোকে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা-মাকে ছাড়া কোনো দুর্গাপূজা পালন করিনি। এবারই প্রথম বাবা নেই। বাবার জন্য কিছু কেনাও হয়নি।

অভিনেতা চঞ্চল তার বাবার কথা বলতে গিয়ে লেখেন, বাবা বেঁচে থাকলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম-প্রথম যে বছর আমি দুর্গাপূজায় তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলাম, সেই নতুন পাঞ্জাবির ঘ্রাণটা তোমার কাছে কেমন লেগেছিল বাবা? শুদ্ধ কি পূজায় আমার কিনে দেওয়া নতুন শার্ট বা পাঞ্জাবিতে কোনো ঘ্রাণ খুঁজে পায়? যে ঘ্রাণ এখনো আমার নাকে, মুখে, সারা শরীরে লেপ্টে আছে!

আরও পড়ুন: পাঁচ বোনের সঙ্গে হাজির চঞ্চল চৌধুরী

স্মৃতিকারত চঞ্চল আরও লেখেন, সেই আমার বাবার কিনে দেওয়া ছিট কাপড় থেকে একমাস ধরে দর্জির ২০ টাকা মজুরিতে বানানো জামার গন্ধ। বাবা, তুমি ঐরকম একটা গন্ধ হয়ে আমৃত্যু আমার শরীরে মেখে থেকো। যেখানেই থাকো ভালো থেকো বাবা। এবার পূজাতেও হয়তো বাড়িতে গেলে গাড়ির হর্ন শুনে, গেটের বাইরে এসে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, রাস্তায় কোনো কষ্ট হয়নি তো বাবা? সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। মা দুর্গা সকলের মঙ্গল করুন।

এমএমএফ/জিকেএস