রাজনীতি

বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না করা হয়: ফখরুল

বিএনপির জাতীয়তাবাদী এ দর্শনের কথা উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী, গোত্র বা বর্ণের নয়, দেশ সবার। আমাদের একটিই পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি। তাই বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি যেন না হয়।

Advertisement

অসাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিএনপি সবসময়ই শুধু অসাম্প্রদায়িকতায়ই বিশ্বাস করি না, অন্য ধর্মের অধিকার রক্ষারও চেষ্টা করি।

আরও পড়ুন: হিন্দুদের পূজামণ্ডপ-বাড়িঘর পাহারার নির্দেশ কাদেরের

শারদীয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে শনিবার (২১ অক্টোবর) রাতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় মির্জা ফখরুল দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানান।

Advertisement

বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাজার বছর ধরে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন হয়ে চলেছে। হাজার বছর ধরে এখানে আমাদের সনাতন ধর্মের মানুষেরা উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছেন। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা যায় এদেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে এবং দেশ স্বাধীন করেছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল কোনো একটি ধর্ম, বর্ণ বা সম্প্রদায় নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করেছি, কাজ করে চলেছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করেছেন। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন দিয়েছিলেন সেটিই বিএনপির দর্শন। সেই দর্শনের মধ্যেও এ কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলা আছে, এই দেশ কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীর জন্য নয়, নিদিষ্ট গোত্রের জন্য নয়, নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য নয়, এই দেশ বাংলাদেশে বসবাসকারী সব মানুষের।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও একই কথা সবসময় বলেন যে, ‘আমি সংখ্যালঘু কথায় বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি এদেশে যারা আছেন সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের পরিচয় একটাই তারা বাংলাদেশি। ধর্ম ভিন্ন হতে পারে, গোত্র ভিন্ন হতে পার, কোনো ধর্মের মানুষ সংখ্যায় কম হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রে সবার অধিকার সমান।’

আরও পড়ুন: দুর্গাপূজায় গুজব রোধে অনলাইনে র‌্যাবের নজরদারি

Advertisement

তিনি বলেন, সংবিধানেও সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু আমরা অনেকে সেটা বিশ্বাস করি না, পালন করি না, চর্চা করি না। দুর্ভাগ্য আমাদের, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমাদের একথা বলতে খুব কষ্ট হয়, যে স্বপ্ন ও আশা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেটা আজ ধুলায় মিশে গেছে। সেই গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে, মানুষের অধিকারগুলো হরণ করা হচ্ছে। এমনকি ন্যূনতম অধিকার মানুষের ভোটের অধিকারটুকুর জন্যও আজকে মানুষকে লড়াই করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব এদেশে ধর্মকে নিয়ে কোনো রকমের বাড়াবাড়ি কেউ যেন না করেন। ধর্মকে নিয়ে যেন কোনো সংঘাত না হয়, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি না হয়। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র যদি থাকে সেখানে সবার অধিকার রক্ষা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমরা মনে করি, এখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। সব মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে আজকে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট কোনো দলের নয়, ব্যক্তির নয়- সংকট সমগ্র জাতির। আজকে দেশকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। এই বিভক্তির রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা ঐক্যের রাজনীতি চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মুক্তি হলে সেখানে মানুষের মুক্তি সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, আসুন এই আনন্দময় দিনে আমরা এই প্রার্থনা করি, আমাদের দেশে যেন শান্তি আসে, মানুষ যেন তাদের অধিকার ফিরে পায়, আমাদের গণতন্ত্র যেন ফিরে আসে, মানুষ যেন মুক্তি লাভ করে, একটি শান্তিময় প্রেমময় দেশ যেন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলতে পারি।

আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িকতা রুখতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে

নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিজের বড় হওয়া ও তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্গাপূজা বলেন, ঈদ বলেন অথবা রমজান- আমাদের যারা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করেন তাদের উৎসবের কথাও যদি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার, রাষ্ট্র সবার।

এসময় বিএনপি মহাসচিব পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মনিন্দ্র কুমার রায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জিএল ভৌমিক, ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু অপু বক্তব্য রাখেন।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রমেশ দত্ত, মোশাররফ হোসেন খোকন, যুবদলের কামাল আনোয়ার আহমেদ, মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তরুণ দে, মিল্টন বৌদ্ধ ও জয়দেব জয় প্রমুখ।

পরে বিএনপি মহাসচিব বনানী মাঠে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং পূণ্যার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

কেএইচ/এমকেআর