টুর্নামেন্টের শুরুতেই বলেছিলাম, এবার হয়তো ভারতের ভালো একটা সুযোগ রয়েছে। একে তো হোম কন্ডিশনে খেলা। তার ওপর গত একটা বছর ওরা কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে চমৎকার ক্রিকেট খেলেছে। অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে জিতে এসেছে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। এশিয়া কাপ জিতেছে। আর দলটাও প্রায় অভিজ্ঞ। টি-টোয়েন্টিতে তারা অনেকদিন ধরে খেলছে। প্রায় ৭-৮ বছর। যদিও সম্প্রতি তাদের ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছিলো না। শুধু কোহলিই প্রায় ম্যাচে রান করছে। ওপেনাররা রান পাচ্ছে না।তবে, নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর বলেছিলাম, এই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে ভারতের। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। ভুলগুলো শোধরানোরও সুযোগ পেয়ে গেছে তারা। তার ওপর আমি বলবো যে, ভারত খুব ভাগ্যবানও বটে। কারণ, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটা দেখুন না! কীভাবে ১ রানে জিতলো! ওই ভাগ্যটা তাদের পক্ষে না গেলে তো সুযোগই ছিল না সেমিফাইনালে ওঠার।আর বিরাট কোহলিও অসাধারণ খেলছে। এই বিশ্বকাপে দেখছি গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, গাপটিল এরা অনেক পাওয়ারফুল ক্রিকেটার। ওদের হাতে অনেক পাওয়ার; কিন্তু বিরাট কোহলি এতো টেকনিক্যাল ব্যাটসম্যান যে, দেখে অবাক হতে হয়। নীরব ঘাতকের মতোই। স্ট্রাইকরেটও অনেক বেশি। আজও যেমন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অসাধারণ ব্যাট করলো।আমার মনে হয়, শচীন টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে যাবে বিরাট কোহলি। ওয়ানডেতে তো ছাড়িয়ে যাবেই মনে হচ্ছে। এখনই তো ২৫টা সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। টেস্টেও করেছে ১১টা। টি-টোয়েন্টিতেও সে অসাধারণ। এক কথায় অপ্রতিরোধ্য। কোথায় গিয়ে থামবে, সেটা সে ছাড়া আর কেউ জানে না।সেমিফাইনালে ভারত খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে। কারণ গ্রুপ রানারআপ হয়েই সেমিতে গেছে তারা। সেমিফাইনালে যে চারটি দল উঠেছে, আমি বলবো বেশ শক্তিশালী চারটি দলই উঠেছে। সেমির লড়াইটাও হবে আশা করি হাড্ডাহাড্ডি। কোন্ দুই দল ফাইনালে যাবে, সেটা আগে থেকে বলা খুবই মুশকিল।তবে সেমিতে ওঠার আগেই শক্তিশালী দুটি দল অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বিদায় নিলো। তাদের একটি দলও যদি সেমিতে থাকতো, তাহলে আরো জমজমাট হতো লড়াইটা। অস্ট্রেলিয়ার কথা বলবো, ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংটা একেবারে দুর্বল। অনভিজ্ঞতাই বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য খারাপ লাগছে বেশি। দলটির ৮-৯ জন ক্রিকেটার খেলে আইপিএলে। দারুণ একটা দল। তাদের কাছ থেকে আরেকটু ভালো পারফরম্যান্স আশা করেছিলাম।দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংটা একেবারেই ভালো হয়নি এই টুর্নামেন্টে। যে কারণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৯ রান করেও হেরে যেতে হয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ২০৯ রান করে স্বস্তিতে ছিল না। আফগানরা প্রথম ১০ ওভারেই তুলে ফেলেছিল ১০০ রান। পরে অভিজ্ঞতার কাছেই মূলত হেরেছিল আফগানরা। তবুও তো তারা প্রায় ১৭০ রান করে ফেলেছিল।আফগানদের প্রসঙ্গ যখন এলো, তখন তাদের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। এবারের বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলেছে। আগের তিনটা ম্যাচেও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পেরেছিল। অবশেষে এই ম্যাচে এসে জয় পেলো তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতোত উড়তে থাকা দলকে মাটিতে নামিয়ে আনলো।বিশ্বকাপের অন্যতম একটি অভিজ্ঞ দলকে হারানো, যে দলটি আগের তিনটি ম্যাচেই আধিপত্য রেখেছিল, তাদেরকে হারানো অসাধারণ। অনুভূতি দিয়ে প্রকাশযোগ্য নয়। আফগানিস্তানের প্রতিটা খেলোয়াড়ের জন্য তাদের ঐতিহাসিক দিন এটি। স্মরণীয় একটি জয়। সবাই’ই চাইবেন এ সময়টাকে বাধাই করে রাখতে।বড়দলগুলোর মধ্যে এই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারালো তারা। জিম্বাবুয়েকে তো এখন নিয়মিতই হারায়। অন্যদলগুলোকেও চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। যেকোনো দলকেই আসলে তারা হারানোর ক্ষমতা রাখে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য একটু দুর্ভাগ্যও বলবো। কারণ, এভাবে হেরে যাওয়াটা আসলে কারও কাম্য ছিল না তাদের। কারণ, শেষ ওভারে তিনটি ফুলটস হয়েছিল। কোনোমতে একটি দুটি বল ব্যাটে আসলেই বাউন্ডারি পার হয়ে যেতো। আসলে মোহাম্মদ নবীও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে অভ্যস্ত। এ কারণে পরিস্থির চাপ সামলে নিয়েছিল সে।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কআইএইচএস/বিএ
Advertisement