ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা এই দুই উপজেলায় ১৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র প্রায় চার বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য এসব যন্ত্র স্থাপন করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। ফলে সঠিক সময়ে স্কুলে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এতে সরকারেরও অপচয় হয়েছে প্রায় ৩১ লাখ টাকা।
Advertisement
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ প্রকল্পের আওতায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের ওই টাকা থেকে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র কিনে প্রতিটি স্কুলে স্থাপন করা হয়। তবে এসব হাজিরা মেশিনের কার্যক্রম চলে এক থেকে দুই মাস। এরপর চার বছর ধরে হাজিরা যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ। শিক্ষকদের দাবি, যন্ত্রগুলো নষ্ট হওয়ায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এদিকে, হাজিরা যন্ত্র কেনায় অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট স্কুল শিক্ষকরা সিন্ডিকেট করে নিম্নমানের প্রতিটি হাজিরা যন্ত্র ছয় থেকে আট হাজার টাকায় কেনার অভিযোগ উঠেছে। অথচ সালথায় স্লিপ প্রকল্প থেকে প্রতিটি হাজিরা যন্ত্র বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর নগরকান্দায় প্রতিটি যন্ত্র কেনা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ হাজার টাকা করে।
এ বিষয়ে সালথার পুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, হাজিরা যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট রয়েছে। যে কারণে ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। মাত্র এক বছরের ওয়ারেন্টি ছিল যন্ত্রটির। ওই এক বছরের মধ্যে যাদের হাজিরা যন্ত্র নষ্ট হয়েছিল তারা মেরামত করার সুযোগ পেয়েছিল। তবে যাদের ওয়ারেন্টি শেষ হয়েছে তারা আর মেরামত করেননি। তাই বিকল হয়ে পড়ে আছে।
Advertisement
সালথা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, স্লিপের বরাদ্দ থেকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদ কমিটি নিজ উদ্যোগে হাজিরা মেশিন কিনেছিল। এখানে শিক্ষক সমিতির কোনো হাত ছিল না। প্রতিটি মেশিন কেনা বাবদ খরচ হয়েছিল ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে যন্ত্রগুলোর ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বেশিরভাগই অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
নগরকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মানোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ২৫ হাজার টাকা করে একেকটি হাজিরা যন্ত্র কেনা হয়েছিল। এসব যন্ত্র বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা নিজেরাই কিনেছেন। সবগুলো যন্ত্রই নষ্ট হয়ে আছে।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রওনক আরা বেগম বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ের হাজিরা যন্ত্র নষ্ট হয়ে আছে শুধু এটা জানি। তবে হাজিরা যন্ত্র কেনার সময় আমি ছিলাম না।
সালথা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার সবগুলো হাজিরা যন্ত্র নষ্ট হয়নি। কিছু ভালো আছে। তবে নষ্টগুলো আর মেরামত করা সম্ভব নয়। সেগুলো মেরামতের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দও নেই।
Advertisement
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. অনিছুর রহমান বালী বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তারপরও যেহেতু বিষয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাই প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা ও শিক্ষকরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
এন কে বি নয়ন/এমআরআর/জেআইএম