সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। বাংলার এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নওগাঁয় অনুষ্ঠিত হয়েছে লাঠিখেলা। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে নওগাঁর সদর উপজেলা শৈলগাছী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম গুমারদহে এই লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়।
Advertisement
এছাড়াও গুটার বিলে অনুষ্ঠিত হয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এই উৎসবের আয়োজন করে গুমারদহ মেলা পরিচালক কমিটি। এদিকে, লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচের আয়োজন ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছিল উৎসবের আমেজ। দীর্ঘদিন পর বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা দেখে উচ্ছ্বাসিত গ্রামবাংলার মানুষেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ দেখতে দুপুরের পর থেকেই দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে নানা বয়সী মানুষ। একটি বাড়ির আঙিনায় স্থানীয় কয়েকজন লাঠিয়াল একত্রিত হন। সেখানে লাঠিয়ালদের গানের তালে তালে ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার শব্দে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খেলায় ঢাকের তালে তালে লাঠিয়ালরা প্রথমে শারীরিক কসরত ও অঙ্গভঙ্গি দেখান। বেশ কিছুক্ষণ চলে এই কসরত। এরপরই শুরু হয় মূল আকর্ষণ। ২ জন লাঠিয়াল শব্দের তালে তালে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন একে অন্যের ওপর। এ সময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চলে প্রতিপক্ষকে হারানোর অদম্য চেষ্টা। এমন দৃশ্য দেখে আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী ও দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে নৌকা বাইচ দেখতে মানুষের ঢল
Advertisement
জিল্লুর রহমান নামে এক দর্শক বলেন, অনেক ছোটবেলায় একবার লাঠিখেলা দেখেছিলাম। অনেক দিনপর আজ দেখলাম খুবই ভালো লাগলো। আজকের বিকেলটা সত্যি অনেক সুন্দর কাটলো।
আরেক দর্শক ইসমাইল হোসেন বলেন, ছোটবেলায় আমরা গ্রামে গ্রামে লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখতে পেতাম। কিন্তু এখন সেসব খেলা হারিয়ে গেছে। অনেকদিন পরে আজ লাঠিখেলা দেখলাম। বেশ ভালো লাগছে।
সুমাইয়া আক্তার (১০) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী বলে, এই প্রথম লাঠিখেলা দেখলাম। খুব আনন্দ লাগছে। বাবার সঙ্গে এসেছি। লাঠিখেলা দেখে নৌকাবাইচ দেখবো।
লাঠিয়াল আব্দুর রহমান বলেন, আগে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে লাঠি খেলতাম অনেক জমজমাট হতো। লাঠি খেলে আমরাও যেমন আনন্দ পেতাম গ্রামের মানুষও আনন্দ পেতো। কিন্তু আগের মতো এখন আর এই খেলার আয়োজন হয় না। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা বন্ধু, বড় ভাই-ছোট ভাইরা মিলে বছরে দুই-একবার খেলে থাকি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে আবারও এই খেলা আগের মতো চালু হবে।
Advertisement
আরও পড়ুন: নৌকাবাইচ দেখতে কুমার নদের পাড়ে উপচেপড়া ভিড়
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বিনোদনের উৎস গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ। এসব খেলা আবারও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন আয়োজন। লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ দেখে দর্শকরাও মুগ্ধ হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে।
জেএস/এএসএম