দীর্ঘদিন ব্যবহারে নড়বড়ে হয়ে গেছে এলাকাবাসীর তৈরি করা ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের ঝুলন্ত সাঁকো। লোকজন উঠলেই সাঁকোটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাঠ নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়েছে। এরপরও বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার একাংশের অবস্থান ধলিয়া খালের ওপারে। পৌরশহরের বাসিন্দা হলেও নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত পাঁচ গ্রামের অধিবাসীরা। এক যুগেরও বেশিসময় আগে মাটিরাঙ্গার ধলিয়া খালের ওপর ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করেছিলেন স্থানীয়রা। একাধিকবার কাঠের সেতুটি স্থানীয় বা সরকারি উদ্যোগে সংস্কার হলেও এখন পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে।
কাঠের সাঁকো পারাপারে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ পাঁচ গ্রামের কয়েকশ পরিবার। স্থানীয় অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি হলেও মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেঁষা ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে। নিম্নআয়ের মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেঁষা ধলিয়া খালের ওপারে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি মসজিদ ও একটি বৌদ্ধ মন্দির আছে। আছে কৃষি জমি আর ফলজ বাগান। সেতু না থাকায় কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। ঝুঁকি নিয়ে কাঠের ঝুলন্ত সাঁকো পার হওয়ার সময় ঘটেছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। এছাড়া সময়মতো রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে।
Advertisement
বরঝালা গ্রামের বাসিন্দা বিমল চাকমা আক্ষেপ করে বলেন, ধলিয়া খালের পূর্বপাশে কোনো জন-মানব বসবাস করছে বলেই কেউ মনে করে না। নির্বাচন এলেই সাধারণ মানুষের কদর বাড়ে। ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু না থাকায় ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সেতু পার হয়ে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় যেতে হয়।
প্রতিশ্রুতির পরও ধলিয়া খালের ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শ্রমিক মো. আবদুল আলী বলেন, আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে বাজারে যেতে হয়। তবে অসুস্থ রোগী আর বয়স্করা এ সেতু পার হয়ে বাজারে যেতে পারেন না।
বরঝালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, একটি সেতুর অভাবে মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের কাছাকাছি থেকেও অন্ধকারে পড়ে আছে মোহাম্মদপুর-বরঝালাসহ পাঁচ গ্রামের মানুষ। শিক্ষকদের প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই নড়বড়ে সেতু পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। জনস্বার্থে ধলিয়া খালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান খোকন জাগো নিউজকে বলেন, বছরের ১২ মাসই ধলিয়া খালে পানি থাকে। ফলে ভোগান্তি মানুষের পিছু ছাড়ে না। জনদুর্ভোগ লাঘবে ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।
Advertisement
মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ধলিয়া খালের ওপারে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। তাদের নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো।
এসজে/এমএস