কয়েক বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চোরাই পথে আসতো প্যাকলোবিউট্রাজল (কালটার)। প্যাকলোবিউট্রাজল উদ্ভিদের এক ধরনের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক। তবে বর্তমানে এটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এতে দেশের বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানিগুলো এটি উৎপাদন করে বিক্রি করছেন বাজারে। আর এতেই বেঁধেছে বিপত্তি।
Advertisement
আম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিম্নমানের প্যাকলোবিউট্রাজলে ভরপুর এখন বাজার। চাষিরা কোনটি আসল আর কোনটি নকল বুঝে উঠতে পারছেন না। এতে সংশয়ে রয়েছেন তারা। এমনকি নকল প্যাকলোবিউট্রাজল তৈরি হয় হচ্ছে চুন, পানি ও বিভিন্ন ধরনের আঠা দিয়ে। এতে এটি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন না চাষিরা।
এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্যাকলোবিউট্রাজল তৈরি করে থাকে। এতে কোনো প্যাকলোবিউট্রাজল বোতল দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটি আসল আর কোনটি নকল। তাই সেভাবে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
জেলার সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের আমচাষি মতিউর রহমান বলেন, আমি প্রায় এক যুগ ধরে আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তেমন লেখাপড়া জানি না। তাই দোকানদার প্যাকলোবিউট্রাজল যে কোম্পানির আমাকে দিতে বলেন আমি গাছে সেটিই প্রয়োগ করি। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখছি গত তিন বছর ধরে প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করে কোনো সুফল মিলছে না।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, গতবছর আমার জিআই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ফজলি আমের গাছে একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। এখন আমি চিন্তায় রয়েছি কোন কোম্পানির প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করলে আমি সুফল পাবো। সবমিলিয়ে সংশয়ে রয়েছি প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করবো নাকি করবো না।
জেলার সব থেকে বেশি আম উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলার পুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, আমার ফজলি, আশ্বিনা, ক্ষিরসাপাত, লক্ষণভোগসহ প্রায় ২০০টি আম গাছ রয়েছে। কিন্তু প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহারের ইচ্ছা থাকলেও তা করতে পারছি না। কারণ বাজার নকল পণ্যে ভরা। গতবছর নকল পণ্য কিনে বাগানে ব্যবহার করেছিলাম। তাই সুফল পাইনি।
এদিকে সম্প্রতি জেলার শিবগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল প্যাকলোবিউট্রাজল ধ্বংস করা হয়েছে। এ সময় উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন আলীকে (২৮) নকল প্যাকলোবিউট্রাজল বিক্রির দায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত।
এই বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম। তিনি জানালেন আরও ভিন্ন ঘটনা। তার দেওয়া তথ্যমতে, বেশিরভাগ চাষিরা প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করেন সারের সঙ্গে। কিন্তু এটি মোটেও উচিত নয়। এটি ব্যবহার করতে হয় গাছে সার প্রয়োগ করার অন্তত ২০-২৫ দিন পরে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, প্রথমত সঠিক নির্দেশনা না পেয়ে আম চাষিরা প্যাকলোবিউট্রাজলের সুফল পাচ্ছেন না। আর বাজার নিম্ন মানের প্যাকলোবিউট্রাজলে ছেয়ে গেছে। এতে সাধারণ চাষিরা বুঝে উঠতে পারছেন না মূলত কোন কোম্পানির প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করবেন। ফলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আম চাষিরা।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, কালটার বা প্যাকলোবিউট্রাজল উদ্ভিদের এক ধরনের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক। এটি তরল বা পাউডার উভয় অবস্থাতেই পাওয়া যায়। আমরা চেষ্টা করছি নিম্নমানের প্যাকলোবিউট্রাজলের উৎপাত কমানোর। কিন্তু তা উঠছে না। কারণ এটি দেখে আসল নাকি নকল চেনা যায় না।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬-৭টি প্রতিষ্ঠানের প্যাকলোবিউট্রাজল পাঠিয়েছি ল্যাবে টেস্টের জন্য। আর এজন্যই মূলত আমরা নিম্নমানের প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এতে স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে আম চাষিদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, দিন দিন বাজারে বাড়ছে নিম্নমানের প্যাকলোবিউট্রাজলের সংখ্যা। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ আসল নকল দেখে চেনার উপায় নেই। আর দামও অনেক কম। আর এজন্য আম চাষিরা এই নিম্নমানের প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহার করছে। এতে কোনো উপকার পাচ্ছেন না তারা। আমরা সব সময় নজর রাখছি। আর কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
এফএ/জেআইএম