খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড কেন্দ্র করে ভারত থেকে ৪১ জন কূটনীতিককে প্রত্যাহার করার পর এবার নিজ দেশের নাগরিকদের ভারত ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে কানাডা।
Advertisement
শুক্রবারের (২০ অক্টোবর) ওই সতর্কবার্তায় কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই, চন্ডীগড় ও বেঙ্গালুরুতে ভ্রমণের সময় নাগরিকরা যেন অবশ্যই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকেন ও কোথাও যাতে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ না করেন।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, সম্প্রতি অটোয়া-নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্কে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে ভারতের গতানুগতিক সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কানাডার নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে কানাডাবিরোধী মিছিল ও বিক্ষোভ হওয়ার তথ্যও আমরা পেয়েছি।
ভারতে কানাডার প্রধান দূতাবাস নয়াদিল্লিতে অবস্থিত। এছাড়া মুম্বাই, চন্ডীগড় ও বেঙ্গালুরুতে কানাডার কনস্যুলেট কার্যালয় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কানাডা সরকারের আশঙ্কা, ভারতে বিশেষ করে রাজধানীসহ উল্লেখিত চারটি শহরে গেলে কানাডার নাগরিকরা হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের শিকার হতে পারেন।
Advertisement
প্রসঙ্গত, ভারতের পরেই কানাডাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিখ বসবাস করেন। দেশটির ২০২১ সালের জনশুমারির তথ্য বলছে, প্রায় ৮ লাখ শিখ ধর্মাবলম্বী উত্তর আমেরিকার এই দেশে বসবাস করেন।
হরদীপ সিং নিজ্জর ছিলেন কানাডার বসবাসকারী শিখদের একজন নেতা। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন, পরে সেখানাকার নারিকত্বও অর্জন করেন।
চলতি বছরের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন। কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে একজন কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
Advertisement
ভারতের সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, হরদীপ হত্যাকাণ্ড সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।
ট্রুডো পার্লামেন্টে এই অভিযোগ তোলার পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিসি উইং (র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কার করে দেয় কানাডিয়ান সরকার। এর পরের দিনই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কানাডিয়ান দূতাবাসের একজন জেষ্ঠ্য কূটনীতিকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেয় নয়াদিল্লি। এরপর থেকে দেশ দুটির কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে শুরু করেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ