হাতির পালে মায়ের সঙ্গে পাহাড়ের পাদদেশে ঘুরতে এসেছিল একমাস বয়সী হাতি শাবক। চলার পথে শাবকটি বিলের কাদায় আটকে যায়। পালের অন্য হাতির পাশাপাশি মা হাতিটিও শাবকটিকে তুলতে ব্যর্থ হয়। উপায় না পেয়ে নাড়িছেঁড়া ধনকে ফেলে পালের সঙ্গে চলে যা মা-ও। তাই ফেলে যাওয়া শাবকের ঠাঁই হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শাবকটিকে পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছে।
Advertisement
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বাঁশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বুধবার সকালে বিলের কাদায় আটকানো হাতি শাবকটি স্থানীয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা উদ্ধার করেন। দীর্ঘ সময় কিছু না খেতে পেয়ে শারীরিক দুর্বল হয়ে পড়ে ২০-৩০ দিন বয়সী ওই শাবকটি। স্থানীয়দের সহায়তায় আট-দশ লিটার গরুর দুধ পান করানো হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দিয়ে করানো হয় চেকআপও।
বাঁশখালীর জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, বুধবার রাতে হাতি শাবকটি পাহাড়ে হাতির পালের চলাচলের পথে রেখে আসেন এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা। কিন্তু হাতির পাল ওই এলাকায় রাতে এলেও শাবকটি নিয়ে যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালেই শাবকটি নিজে নিজে তাকে আগেরদিন পরিচর্যা করা স্থানে চলে আসে। এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা বিষয়টি বন বিভাগকে জানালে শাবকটিকে আবারও পরিচর্যায় নেওয়া হয়। দুধ খাওয়ানো ও শারীরিক অবজারভেশনের পর ঊর্ধ্বতন মহলের পরামর্শ মতে সন্ধ্যায় হাতি শাবকটি ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।
বাঁশখালীর জলদী বিটের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, একটি মা ছাড়া বন্যহাতির শাবক মানব আদর স্নেহে কাবু হয়ে গৃহপালিত প্রাণীর বাচ্চার মতোই আচরণ করেছে। যত্ন নেওয়া লোকজনের গা-ঘেঁষেই ছিল সারাটা দিন।
Advertisement
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাতির এ আচরণটি বড়ই অমানবিক। পালের কোনো সদস্য দলছুট হলে তাকে পুনরায় আর দলে ভিড়ায় না। সে সদস্যটি ছোট বা বড় হোক। শাবকটির বেলায়ও তেমনটি ঘটেছে। দলপ্রধানের কারণে মা হাতিও নাড়িছেঁড়া ধনকে সঙ্গে নিতে পারেনি। তাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।
কক্সবাজারের ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ইনচার্জ (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালী থেকে একটি হাতি শাবক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রায় একমাস বয়সী পুরুষ শাবকটি শারীরিকভাবে দুর্বল। এর আগেও তিনমাস বয়সী একটি নারী হাতি শাবক টেকনাফ থেকে উদ্ধারের পর পার্কে আনা হয়েছিল। তার নাম যমুনা, বয়স এখন দুবছর।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, হাতি শাবক লালন-পালন অত্যধিক ব্যয়বহুল। প্রতিদিন এক ডজন ল্যাকটোজেন (শিশুদুধ) খাওয়াতে হয়। বছর দুয়েক পরই প্রাকৃতিক খাবারে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করা সম্ভব। যমুনার মতো করেই নতুন শাবকটিকে পরিচর্যা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সায়ীদ আলমগীর/এসজে/জিকেএস
Advertisement