আইয়ুব হোসেনের বাড়ি রংপুরে, শিক্ষকতা করতেন খুলনায়। তার স্কুলটি বেসরকারি। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে তিন বছর চাকরির পর ছেড়েছেন শিক্ষকতা। তার পক্ষে স্বল্প বেতনে ভাড়া বাসা নিয়ে সপরিবারে খুলনায় থাকা সম্ভব ছিল না। মাসে একবার রংপুরে গ্রামের বাড়িতে যেতে যাতায়াত খরচও অনেক। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ এলাকায় বদলির সুযোগও না থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষকতা পেশা ছাড়েন তিনি।
Advertisement
শুধু আইয়ুব হোসেন নয়, এমপিওভুক্ত কয়েক লাখ শিক্ষক এমন ভোগান্তি নিয়েই দিন পার করছেন। অনেকের নিজ এলাকা থেকে ৩০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুপারিশ করা হয়। বাধ্য হয়ে তারা ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। বদলির সুযোগ না থাকায় নিজ এলাকা বা আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার সুযোগ থাকে না।
শিক্ষকরা বলছেন, অনেকের বৃদ্ধ বাবা-মা অসহায়ভাবে বাড়িতে একা থাকেন। অথচ তাদের দেখার কেউ নেই। বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান তাদের পাশে থাকতে পারেন না, সেবা করতেও পারেন না। নিকটাত্মীয়-স্বজন মারা গেলেও শেষ দেখার সুযোগও থাকে না।
এমন পরিস্থিতিতে কয়েক বছর ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বদলির নীতিমালা করার দাবি জানিয়ে আসছে ‘বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত শিক্ষক কমিটি’। তারা শিক্ষাসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান বরাবর ৭ বার স্মারকলিপি দিয়েছেন। সর্বশেষ তারা গত ১৭ অক্টোবর স্মারকলিপি পাঠান। তাতে দ্রুত বদলি নীতিমালার করার দাবি জানানো হয়।
Advertisement
বেসরকারি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি নিরসনে ও তাদের দাবির মুখে অবশেষে বদলি নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনটিআরসিএ’র সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমপদে বা সমস্কেলে পারস্পরিক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রস্তুত করতে যাচ্ছে সরকার।
নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার (২২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) এ নিয়ে নোটিশ জারি করে।
তাতে বলা হয়, সভায় অংশ নেবেন মাউশি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এনটিআরসির চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালু করতে একটি নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। এবার বদলি নীতিমালা চূড়ান্ত করে শিক্ষকদের ভোগান্তি দূর করতে চায় মন্ত্রণালয়।
Advertisement
বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত শিক্ষক কমিটির সভাপতি গৌতম কুমার জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকরা পরিবার ফেলে দূর-দূরান্তে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। তাদের পরিবারও ভালো নেই। পার্বত্য জেলায় কর্মরত নারায়ণগঞ্জের শিক্ষিকা নাজমা খাতুনের সংসার ভাঙার মতো অবস্থা। সিলেটে কর্মরত কুড়িগ্রামের একজন শিক্ষকের মা-বাবা দুজনই ক্যানসার আক্রান্ত। বদলি না থাকায় তিনি দিশেহারা। এমন হাজারো উদাহরণ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষককে তার নিজ এলাকা থেকে ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। অথচ এ শিক্ষকরা শুরুর দিকে বেতন পান মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা। যা দিয়ে বর্তমানে একটা সংসার চলতে পারে না। ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে তিনি থাকবেন কীভাবে? তারা খাবেন কী? এটা চরম অমানবিক। বদলির ব্যবস্থা হলে নিজ বাড়ি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সুযোগ পাবেন শিক্ষকরা। এজন্য দ্রুত আমরা বদলি নীতিমালা চাই।’
এএএইচ/এসটি/এমএস