বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ার্ড পেলেন এক ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠান। সাইবার জগৎ নিরাপদ রাখতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে তাদের এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। প্রথমবারের মতো দেওয়া এ অ্যাওয়ার্ড পাওয়াদের মধ্যে রয়েছে একটি ভারতীয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানও।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মনোনীতদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ অর্থের চেক তুলে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক এ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রাজধানীর সেন্ট জোসেফ স্কুলের শিক্ষার্থী তামজিদ রহমান। প্লেন্টি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করায় তাকে ‘স্মার্ট স্টুডেন্ট’ হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ভারতের আনির রাজামালা ‘অ্যান্ড নাও ফাউন্ডেশন’, স্টার্টআপ ক্যাটাগরিতে আফাসানা আক্তার কানিজের ‘বাইট ক্যাপসুল’, সরকারি ক্যাটাগরিতে ‘বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক’ এবং ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)’। পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের পক্ষে ডিআইজি আমেনা বেগম এবং বিটিআরসির পক্ষে চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ক্রেস্ট নেন।
Advertisement
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য সাইবার জগৎ নিরাপদ রাখতে নিরলস কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে বিশেষ ক্যাটাগরিতে বঙ্গবন্ধু সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ‘পথচলা ফাউন্ডেশন’। সাইবার বুলিং রুখতে তিন হাজারের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে পথচলা ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অন্যদের মধ্যে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শামসুল আরেফিন, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ কামরুজ্জামান, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফর উল্লাহ প্রমুখ। অতিথিরা মনোনীতদের হাতে ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক ও চেক তুলে দেন।
প্লেন্টি প্রোজেক্ট নিয়ে স্মার্ট স্টুডেন্ট হিসেবে অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী তামজিদ রহমান বলেন, ‘এখন ডিজিটাল যুগ। বাংলাদেশও ডিজিটাল। এমন যুগে জন্ম নেওয়ায় নিজেদের সুরক্ষায় নিজেদেরই কাজ করতে হবে। সেই চিন্তা থেকে বাবা-মায়ের থেকে অল্প কিছু টাকা নিয়ে স্কুলে সচেতনতামূলক কর্মশালা করি। এরপর বন্ধুদের নিয়ে ই-বুক লঞ্চ করেছি। প্লেন্টি প্রোজেক্টের যাত্রাটা এভাবে। আজকে পুরস্কৃত হওয়ায় সামনের দিনে উদ্ভাবনী কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবো।’
বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি ও স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের ডিআইজি আমেনা বেগম বলেন, অনলাইনে ১ হাজার ২০০ ব্যাংকার্স ও ৬ হাজার নারী পুলিশকে সচেতন করতে পেরেছি। আজকে এ কাজের স্বীকৃতি পেয়ে আমরা আরও অনুপ্রাণিত।
Advertisement
সম্মাননা গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়ায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, আমাদের নিরাপদ ইন্টারনেট এবং সুরক্ষিত ডিজিটাল স্পেস দরকার। এজন্য ২০২১ সালে আমরা ১০ জন অফিসার নিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি সেল তৈরি করি। এ সেলের মাধ্যমে আমরা অভিযোগ গ্রহণ করি। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৫ হাজার কনটেন্ট সরিয়েছি আমরা। ফেসবুক থেকে ৪০০টি বেটিং লিংক মুছতে সক্ষম হয়েছি।
বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত পথচলা ফাউন্ডেশনের মনীষা মিম নিপুণ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের অধিকার রাখে। অথচ সেখানে আমাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হয়। বুলিং করা হয়। এ বুলিং ও হয়রানি রুখতে উদ্যোগ নিয়ে পথচলা ফাউন্ডেশন দাঁড় করিয়েছি আমরা।
অ্যাওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা ও আয়োজনে জড়িতরা জানান, অ্যাওয়ার্ডের জন্য দুই শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সাড়া পেয়েছেন তারা। সেখান থেকে ৩৫টি সাইবার উদ্যোগ যাচাই-বাছাই করে ১২টি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে সেটা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ছয়জনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আগামীতে এ পুরস্কারে ক্যাটাগরি বাড়ানো হতে পারে।
বিজয়ীদের প্রত্যেককে ১০ হাজার ডলার আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২২ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’-এর মাধ্যমে এ অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
সেই অর্থ দিয়ে সাইবার সুরক্ষায় কাজে নিয়োজিতদের পাশে থাকতে এ সম্মাননা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদ্যোগে সহযোগী হিসেবে ছিল ইউএনডিপি, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি।
এএএইচ/এমএএইচ/জেআইএম