ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আগে গত কয়েক বছর ঢাকার মানুষকে ব্যাপক ভুগিয়েছে চিকুনগুনিয়া। তীব্র জ্বর, হাড় কাঁপানো ব্যথা আর শারীরিকভাবে ব্যাপক দুর্বল করে দেওয়া চিকুনগুনিয়ার যন্ত্রণা জানেন ভুক্তভোগীরা। মশাবাহিত সেই চিকুনগুনিয়ার টিকা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে ভারতের অন্যতম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক।
Advertisement
একই সঙ্গে গরুর লাম্ফি স্কিন ডিজিসের টিকার তৃতীয় ট্রায়াল শেষে অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির একজন মুখপাত্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি এ কথা জানান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ‘কোভ্যাক্সিন’র ট্রায়াল চালাতে চায় ভারত
ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান কৃষ্ণা এলা ভ্যাকসিন গবেষণায় বিপ্লব এনেছেন। বিশেষ করে করোনার কঠিন সময়ে অক্সফোর্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার মতো ভ্যাকসিনের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে কোভ্যাক্সিন আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দেয় ভারত বায়োটেক।
Advertisement
করোনার দাপট একটু কমলে শুরু হয় নতুন গবেষণা। হাতে ইনজেকশন ফোটানোর ভীতিতে করোনার টিকা নেওয়া থেকে সরে যান অনেকে। ভারত বায়োটেক ভাবতে থাকে কীভাবে এটা দূর করা যায়। পরে ইন্ট্রানাসাল টিকা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় সংস্থাটি। ২০২২ সালে যেটা ব্যবহারের অনুমোদন মেলে। নাকে ড্রপের মাধ্যমে টিকা কার্যকর হওয়ায় সহজ হয় কোভিড মোকাবিলা।
এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে কীভাবে বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায় তা নিয়ে কাজ করছে ভারত বায়োটেক। শুধু তাই নয়, কীভাবে স্বল্প রিসোর্স ব্যবহার করে টিকা সাশ্রয়ী করা যায় সে চেষ্টাও সবসময় থাকে বলে জানান ওই মুখপাত্র।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন প্রযুক্তি উন্নয়নে বিশ্বনেতাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে
শিশুদের ডায়রিয়া রোধে রোটা ভাইরাসের টিকার ডোজ কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে কৃষ্ণা এলা বলেন, প্রথমে রোটা ভাইরাসের টিকা ছোট শিশুদের মুখে আড়াই এমএল পরিমাণ দিলে তারা মুখ থেকে বের কর দিতো। আর একবার বের করে দিলে ওই শিশুকে আর মুখে খাওয়ানোর এ টিকা দেওয়া যেত না।
Advertisement
ভারত বায়োটেক এটা নিয়ে কাজ শুরু করে। যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবির বাংলাদেশি বিজ্ঞানি ডা. ফিরদৌসী কাদরি। তারা রোটাভ্যাকের ডোজ আড়াই মিলি থেকে হাফ মিলিতে (.৫০) নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। এতে যেমন পরিবহন খরচ, উৎপাদন খরচ সবই কমে তেমন শিশুদের ওপর কার্যকারিতা বেড়ে যায় মুখ থেকে বেরিয়ে না আসার কারণে।
টিবি ভ্যাকসিনেরও ট্রায়াল চালাচ্ছে ভারত বায়োটেক। জিকা ভাইরাস নিয়ে গবেষণাও শেষ পর্যায়ে। আর ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, এটা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ডেঙ্গুর ভাইরাস খুবই জটিল। এদের ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। তাই এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করাও কঠিন।
শুধু মানুষের টিকা নয়, পশু-পাখি ও গাছের বিভিন্ন রোগের টিকা নিয়েও কাজ করছে ভারত বায়োটেক। ভারত কীভাবে সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে তার উদাহরণ হতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশে তুলনামূলক কম মূল্যে টিকা দিচ্ছে তারা। ১৯৯৬ সালে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের জেনম ভ্যালিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত বায়োটেক। মি. এল্লার কোম্পানিতেই এখন কাজ করেন কয়েক হাজার মানুষ। শুধু ভারত বায়োটেকে কর্মী দেড় হাজারের বেশি। এছাড়া বেশকিছু সিস্টার কনসার্ন আছে। তিনিই এই এলাকাকে শিল্প এলাকায় পরিণত করেছেন। এখন এখানে আছে দুইশোর বেশি কোম্পানি। ভারত বায়োটেকের বিনিয়োগ ৩৫ লাখ ডলারের বেশি।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো
ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো রোগের টিকা নিয়েও কাজ করছে ভারত বায়োটেক। পশুর লাম্ফি ডিসিজ, যা পক্সের মতো ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল ভারতে। গত কোরবানি ঈদের আগে বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে ছড়ায় রোগটি। কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয় এ রোগে। সেই লাম্ফি ভাইরাসের টিকাও প্রায় অনুমোদন পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র।
আলু, পেঁয়াজসহ এমন যে কোনো খাদ্যপণ্যে যদি কোনো রোগ বিপর্যয় নিয়ে আসে তাহলে সেটা রোধে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ভারত বায়োটেক কাজ করছে বলেও জানান কৃষ্ণা এলা। করোনার মতো খাদ্যপণ্যের কোনো রোগ সামলাতে যেন কষ্ট কম হয় সেজন্য এ উদ্যোগ।
এএসএ/এমকেআর/জিকেএস