খান মুহাম্মদ রুমেল কবিতার পাশাপাশি গল্প লেখেন। তবে কবিতাই তার যাপন। কবিতাই জীবনের প্রেক্ষাপট। কবিতাকে তিনি বলেন নিস্তারহীন দহনযাত্রা। এছাড়া সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে লেখা তার কলামও বেশ জনপ্রিয়। তবে কি সব ছাপিয়ে কবিতার প্রতি দুর্বলতা বেশি? এ প্রশ্নের উত্তর মেলে না স্পষ্ট করে। কবিতা লেখার জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা। তিনি কাজ করেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে।
Advertisement
তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হলো—‘নন্দিত অন্ধকার’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সোনার বাংলা সাহিত্য পুরস্কার, ‘দুঃখ ফোটার দিনে আমি তোমার হয়ে যাই’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ঢাকা ব্যাংক আনন্দ আলো তরুণ কবি পুরস্কার। এছাড়া জুম বাংলা সাহিত্য সম্মাননা এবং ক্র্যাব সাহিত্য সম্মাননা পেয়েছেন।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগেো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?খান মুহাম্মদ রুমেল: এখন পর্যন্ত দুটি বই চূড়ান্ত হয়েছে। কবিতার বই ‘চোখের পল্লবে ঘুম নামে’। গল্পের বই ‘রাজধানীর বুকে আমার যাত্রা বিরতি’। তবে এটির নাম পরিবর্তন হতে পারে। দুটি বই-ই প্রকাশ করবে অনিন্দ্য প্রকাশ। এছাড়া সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিভিন্ন সময় লেখা স্মৃতিধর্মী লেখা নিয়ে এবার একটি বই হতে পারে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
Advertisement
আরও পড়ুন: লিখতে চান অনেকেই কিন্তু পড়তে চান কম: শফিক হাসান
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?খান মুহাম্মদ রুমেল: প্রথমেই বলবো, মেলার পরিসর আরেকটু বাড়ুক; এটি চাই। যেমন গত বছর মেলার পরিসর অনেকটা ছোট ছিল। স্টল বিন্যাস ভালো হয়নি। আবার এর আগের বছর মেলার আয়তন অনেক বড় ছিল। ফলে পাঠক-দর্শনার্থীরা হেঁটে হয়রান হয়ে যেতেন। তাই বলছি, গতবারের অতটা ঘিঞ্জি নয়, আবার আগের মতো অতটা বড় নয়। একটু মাঝামাঝি কিছু করা হোক।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?খান মুহাম্মদ রুমেল: বেশ ক’বছর ধরে বাংলা একাডেমি মেলার মাঠে নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিকে কফিশপ ভাড়া দিচ্ছে। এর বাইরে আর কাউকে দোকান করতে দিচ্ছে না। মেলার মাঠে কিংবা আশপাশে কোনো চা দোকান বসতে দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে করপোরেটের বিস্বাদ কফি খেতে হচ্ছে মানুষকে। এটি বন্ধ করা হোক। খাবারের দোকানে গলাকাট দাম। দাম কমানো হোক। বারোয়ারি চরিত্র পাল্টে মেলাকে আরেকটু পাঠক উপযোগী করা হোক। মেলার মাঠে গত বছর বসার স্থান ছিল না। যেটা এর আগের বছরও ছিল। ছিল একটি স্পন্সর কোম্পানির নির্দিষ্ট কিছু বেঞ্চ বা টুল। এটাও বিরক্তিকর ছিল। বাংলা একাডেমির ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ ছিল মেলার একেবারে শেষপ্রান্তে খাবারের দোকানের পাশে। পরে যদিও সামনে আনা হয়েছিল। আমি চাই এবার শুরু থেকেই লেখক বলছি মঞ্চ সুন্দর একটি স্থানে রাখা হোক। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চও অনেকটা পেছন দিকে ছিল। এটাও ভালো জায়গায় রাখা হোক। মোড়ক উন্মোচনের নামে অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি বন্ধ হোক।
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে না কমছে?খান মুহাম্মদ রুমেল: এটি প্রকাশকরা ভালো বলতে পারবেন। তবে গত মেলায় আমার গল্পের বই ‘অন্ধ তিরন্দাজ’ দ্বিতীয় মুদ্রণ বের হয়েছে। শিশু-কিশোর উপযোগী বই ‘রাসেলের অঙ্করা কথা বলে কষ্টও পায়’—এটারও দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: অনুবাদ-সেল নামে আলাদা কর্নার হোক: আবু আফজাল সালেহ
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন চোখে দেখেন?খান মুহাম্মদ রুমেল: খুবই ইতিবাচকভাবে দেখি। আমাদের এখানে একটা বিষয় খেয়াল করবেন, প্রকাশনীগুলো বইয়ের তেমন একটা প্রচার-প্রচারণা চালান না। শুধু পরিচিত দু’একজন লেখকেরটা করেন। ফলে আমাদের লেখকরা অনেকেই নিজের ফেসবুক কিংবা অন্য মাধ্যমে নিজের বইয়ের প্রচার করেন। আসলে একজন লেখক চান তার বইটা বেশি মানুষ পড়ুক। ফলে তিনি পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রচার করতেই পারেন। আরেকটা কথা বলতে চাই—আমাদের বেশিরভাগ পাঠক কিছু পরিচিত লেখক এবং পরিচিত প্রকাশনীতেই বেশি ভিড় করেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিংবা অপরিচিত ভালো লেখা খোঁজার ঝোঁক তাদের কম। এটির অবশ্য যুক্তিও আছে। কারণ অপরিচিত লেখকদের ভালো লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা আমাদের এখানে গড়ে ওঠেনি। ফলে লেখক নিজের বইয়ের প্রচার নিজেই করেন। তবে প্রচার করতে গিয়ে হ্যাংলামি মোটেও উচিত নয়।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?খান মুহাম্মদ রুমেল: আমি পরামর্শ দেওয়ার কেউ নই। সেই যোগ্যতাও আমার নেই। তবে একটা অনুরোধ করতে পারি। পড়ুন। বেশি বেশি পড়ুন। পড়তে পারার সৌভাগ্য সবার হয় না।
এসইউ/জিকেএস