ফিচার

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মো. হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী

Advertisement

শত সীমাবদ্ধতা এবং ছোট ক্যাম্পাস নিয়ে দুর্বার গতিতে আপন লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে পুরান ঢাকা তথা বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির বয়স আঠারো পেরিয়ে উনিশে পড়লেও প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত বয়স একশ পঞ্চাশ বছর। সম্ভবত এটিই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেটি পাঠশালা থেকে পর্যায়ক্রমে স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৬৮ সালে জগন্নাথ রায় চৌধুরী জগন্নাথ স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন। বালিয়াটির (মানিকগঞ্জ) জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরীর মধ্যম পুত্র (জগন্নাথ রায় চৌধুরীর তিন সন্তান ছিলেন) কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ১৮৮৪ সালে এটিকে কলেজে রূপান্তরিত করে নামকরণ করেন জগন্নাথ কলেজ। তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য এবং সহযোগিতা করেছিলেন অনাথবন্ধু মল্লিক, আইনজীবী ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও বিচারপতি সারদাচরণ মৈত্র। জগন্নাথ কলেজ মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। জগন্নাথ কলেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়লে সন্তোষের জমিদার রাজা মন্মথ রায় চৌধুরী কলেজ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে তাদের টাঙ্গাইলস্থ প্রমথ-মন্মথ কলেজটিকে জগন্নাথ কলেজের সঙ্গে যুক্ত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্নে তার সুতিকাগৃহে যে দুটো কলেজ তাদের পুষ্টি, সহচার্য ও সেবা দিয়ে পালন করেছিল তার একটি হলো জগন্নাথ কলেজ এবং অপরটি ঢাকা কলেজ। জগন্নাথ কলেজ তার ছাত্র, শিক্ষক, বই-পুস্তক ইত্যাদি দিয়ে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার হাঁটি হাঁটি পা পা অবস্থা থেকে উত্তরণে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা কলেজের ডিগ্রি ক্লাসের সমস্ত ছাত্র নিয়ে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। জগন্নাথ কলেজ পূর্ববাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পরিণত হয়।

Advertisement

কালের পরিক্রমায় এটি সরকারি জগন্নাথ কলেজ, সরকারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলা শুরু করে। পথচলার শুরুর দিকটা এতটা মসৃণ ছিল না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ এর ২৭ (৪) ধারা মোতাবেক এটি পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। এ ধারায় উল্লেখ ছিল—বিশ্ববিদ্যালয়টি তার নিজস্ব আয় থেকে ব্যয় করবেন। যার ফলে প্রথমদিকে অনেক ভালো ভালো শিক্ষক চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেননি এবং তৎকালীন কলেজের প্রায় সব শিক্ষকই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্য সরকারি কলেজে যোগদান করেন।

তখন কলেজ আমলের মাত্র সাতজন (সম্ভবত) শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এ মুহূর্তে যাদের কথা মনে পড়ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রথম প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম এবং অন্যজন হলেন পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন। ২০১২ সালের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে ২৭(৪) ধারা বাতিল হলে এটি একটি পরিপূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলা শুরু করে।

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বলে পূর্বতন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হয়। তাদের নিয়ে অল্প কয়েকটি বিভাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু হয়। পরে যুগোপযোগী অনেক বিভাগ খোলা হয়। সংগীত, চারুকলা, নাট্যকলা বিভাগ খোলার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত করা হয়। পহেলা বৈশাখে পুরান ঢাকার প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। স্বল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসব আয়োজন করে বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি অনুষদে ৩৯টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে ১৫ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী, ৬৭৮ জন শিক্ষক ও প্রায় ৭০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি মেধা বিকাশের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, ডিবেটিং সোসাইটি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, রঙ্গভূমি, সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, ফিল্ম ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, মাইম সোসাইটি। সেবামূলক সংগঠন হিসেবে রয়েছে বাঁধন, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ইউনিট, বিএনসিসি। সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেসক্লাবসহ নানা মাধ্যম।

Advertisement

বিশ্বের একমাত্র অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পনেরো বছর পর ২০২০ সালে উদ্বোধন করা হয় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। মাত্র ১১ দশমিক ১১ একর জায়গা নিয়ে পথচলা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ধুপখোলা খেলার মাঠে ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। যাতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ। বর্তমান ক্যাম্পাসে জায়গার সংকুলন না হওয়ায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমির ওপর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ চলমান। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এরই মধ্যে দৃষ্টিনন্দন লেক খননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা থেকে শুরু করে যে কোনো চাকরির পরীক্ষায় প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কৃতি শিক্ষার্থীরা তাদের লব্ধজ্ঞান প্রয়োগ করে বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হিসেবে সুযোগ করে নিয়েছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রখ্যাত অভিনেতা মরহুম এটিএম শামসুজ্জামান, জাহিদ হাসান, মীর সাব্বির, শামীম জামান, অভিনেত্রী রত্না তাদের অভিনয় দিয়ে সবার মন কেড়েছেন। কণ্ঠশিল্পী বিপ্লব, সেলিম খান, শান্তা নিজেদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কেও সবার সামনে তুলে এনেছেন।

বিশ্ববিখ্যাত সাতারু ব্রজেন দাস ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ক্রীড়া ভাষ্যকার আবদুল হামিদ, খোদাবক্স মৃধা ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থী। নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জর্জিস আনোয়ার নাঈস সাফ গেমসে স্বর্ণজয় করেন। বর্তমান জাতীয় ক্রিকেট এবং ফুটবল দলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ হয়েছেন; যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশাসনিক দক্ষতার প্রমাণ।

উপাচার্য হিসেবে প্রথিতযশা পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. কামরুল খান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জামালপুরে, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ও উপ-উপাচার্য হিসেবে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহা. আলী নূর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেজ অ্যান্ড টেকনোলজিতে নিয়োগ লাভ করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত জাহাঙ্গীর এবং ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন। সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অণিমা রায়, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা জাতীয় পর্যায়ের সংগীতশিল্পী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. মো. আইনুল ইসলাম বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছেন সমুজ্জল।

সবচেয়ে বড় আশার জায়গা হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করছেন। এ সব মেধাবী শিক্ষকদের হাত ধরেই আগামীর চ্যালেঞ্চ নিতে প্রস্তত হচ্ছে আগামীর প্রজন্ম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ছে মেধা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন, তাদের মধ্যে এ মুহূর্তে যাদের নাম মনে পড়ছে; তারা হলেন—ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলদার, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার মজুমদার।

জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। বৃটিশ বিরোধী প্রথম নাটক মঞ্চস্থ করেছিল জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন শিক্ষার্থী রফিক। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথ কলেজের অনেক শিক্ষার্থী শাহাদাৎ বরণ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বিজ্ঞান ভবনের সামনে ছিল একাত্তরের পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যটি দেশের একমাত্র ভাস্কর্য, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি এবং গণহত্যা ফুটে উঠেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করলে তাঁর পক্ষে ১৯৬৬ সালে সর্বপ্রথম মিছিল করেছিলেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথের ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে স্থান করে নিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজু, সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশিদ, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী হারুণ-আল-রশিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুসহ অনেকে। বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদধূলি পড়েছিল দেড়শ বছরের পুরোনো শিল্প-সাহিত্য এবং রাজনীতির আঁতুরঘর খ্যাত জগন্নাথের ক্যাম্পাসে।

খাতা-কলমের হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৮ পেরিয়ে ১৯ হলেও এর আবেগের বয়স ১৫০ বছর। তাই তো এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো অনুষ্ঠানে ছুটে আসেন কলেজ আমলের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই গঠনে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয় দেখা যায়। বলা যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স একটি নির্দিষ্ট সংখ্যামাত্র কিন্তু এর আবেগ-ভালোবাসা অপরিসীম।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু হোসেন সিদ্দিক, অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ধারাবাহিকতায় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য তাঁর মেধা ও মনন দিয়ে কাজ করে চলেছেন। ছোট ক্যাম্পাস, জায়গার অপ্রতুলতা, নানা সীমাবদ্ধতা, গবেষণাগারের অভাব, ছাত্র হলবিহীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার জন্য। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আজকের শিক্ষার্থীদের হাত ধরে একদিন বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। শুভ জন্মদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/এএসএম