শেষ ওভারে প্রয়োজন ১০ রান। উইকেটে তখন চার্লস ব্রাফেট। বোলার মোহাম্মদ নবী। আফগান ক্রিকেটের পোস্টারবয়। আইপিএল-বিপিএল খেলে টি-টোয়েন্টিতে সিদ্ধহস্ত। তবুও ক্যারিবীয় অভিজ্ঞতার সামনে আফগান অনভিজ্ঞতার জয় দেখার দুরহ সাহস করতে পারছিলেন না কেউ; কিন্তু মোহাম্মদ নবীর চতুর বোলিং প্রথম দুই বলেই উড়িয়ে দিলো সব শঙ্কা। ঐতিহাসিক জয়টা পেতে তখন ৪ বলে প্রয়োজন ১০। তৃতীয় বলে উঠিয়ে মারলেন ব্রাফেট। আগের ৪ বলে যিনি ১৩ রান নিয়েছিলেন; কিন্তু বল উঠে গেলো আকাশে। বাউন্ডারির কাছাকাছি অনেক দৌড়ে গেলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। দৌড়ের ওপরই অসম্ভব ক্ষিপ্রতায়, অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ক্যাচটি তালুবন্দী করলেন। করেই মাটিতে গড়াগড়ি দিলেন তিন পাক। তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। তিন বল তখনও বাকি। কিন্তু জয়টা যে লেখা হয়ে গেছে আফগানিস্তানেরই ললাটে! বাকি তিন বল ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। মোহাম্মদ নবীর কাছ থেকে এই তিন বলে ১০ রান নেয়ার ক্ষমতা তখন আর কোন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের নেই। আফগানিস্তানের কাছে ৬ রানের ব্যবধানে হেরে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।সুতরাং, এসে গেলো অবিশ্বাস্য এবং ঐতিহাসিক এক জয়। টেস্ট প্লেইং দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড রয়েছে শুধু আফগানিস্তানের। এবার বিশ্বকাপের মত বিশ্বমঞ্চে এসে তারা হারিয়ে দিল টি-টোয়েন্টির অবিসংবাধিত একটি দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে! এ যেন ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কেনিয়ার কাছে ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারেরই আরেকটি সংস্করণ! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০৯ রান তাড়া করতে নেমে আফগানিস্তান যেভাবে ব্যাট করেছিল, তাতে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, পল কলিংউড থেকে শুরু করে অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটার। এরপর আফগানরাও দাবি তুলেছিল, টেস্ট প্লেইং দেশগুলোর বিপক্ষে আমাদের আরও বেশি সুযোগ দেয়া হোক। তাহলে নিজেদের প্রমাণ করার আরও বেশি বেশি সুযোগ পাবো। শচীন-কলিংউডারও তাদের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে শুরু করেছিলেন, আফগানদের আরও সুযোগ দেয়া উচিৎ। নাগপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শচীনদেরই বুকটা ফুলিয়ে দিলেন যেন আফগান ক্রিকেটাররা।পুঁজি মাত্র ১২৩ রান। তবুও আফগান বোলারদের সামনে এই রান টপকাতে পারলো না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ওভারের থ্রিলারে শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের কাছে ৬ রানে হেরে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইলকে বিশ্রাম দিয়েও এই ম্যাচটা সহজে জিততে চেয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ক্রিকেটের উদীয়মান শক্তি আফগানিস্তান প্রমাণ করলো, এবার তাদেরকেও সুযোগ দেয়ার সময় এসেছে। নাগপুরের বিদর্ভ স্টেডিয়ামে আফগানদের করা ১২৩ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থমকে গেলো ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১১৭ রানে। ১২৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৭ রানের মাথায় নিজের খাতায় কোন রান যোগ না করেই আউট হয়ে যান গেইলের পরিবর্তে নামা এভিন লুইস। ২২ রান করে আউট হন চালর্স জনসন। আন্দ্রে ফ্লেচার ইনজুরির কারণে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন।এরপর আফগান বোলারদের সামনে কোণঠাসা হতে থাকে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে তারা। মারলন স্যামুয়েলস ৫, দিনেশ রামতিন ১৮, ডোয়াইন ব্র্যাভো ২৮, আন্দ্রে রাসেল ৭, ড্যারেন স্যামি ৬, ব্রাফেট ১৩ রানে আউট হন। আহত হয়েও শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমেছিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার। কিন্তু মোহাম্মদ নবীর কাছ থেকে আর বড় শট আদায় করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে থামতে হলো ১১৭ রানে।আফগান বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ নবী এবং রশিদ খান ২টি করে উইকেট নেন, ১টি করে উইকেট নেন আমির হামজা, হামিদ হাসান এবং গুলবাদিন নাইব। আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement