খেলাধুলা

বাংলাদেশ-ভারত, ৪-১ নাকি ৩-২?

ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। শুরুটাও হয়েছে দারুণভাবে। আফগানিস্তানকে হারিয়ে। তবে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি টাইগাররা। তিনটি ম্যাচ খেলে একটিমাত্র জয়। ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে বাজেভাবেই হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল।

Advertisement

অন্যদিকে বিশ্বকাপে ভারত টপ ফেবারিট হলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে এক অজানা দুর্বলতায় ভোগেন রোহিতরা। গত এক বছরে মোট চারবার ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩-১ এ এগিয়ে রয়েছে টাইগাররা। আজ কি তবে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ? নাকি ভারত ৩-২ এ ব্যবধান কমিয়ে আনবে?

গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। মেহেদী হাসান মিরাজের অসাধারণ বীরত্বে ওই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ভারত সাকিবের ৫ এবং এবাদতের ৪ উইকেটের কারণে ভারত অলআউট হয়ে যায় ১৮৬ রানে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের অবস্থাও চলে যায় পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে অপরাজিত ৩৮ রান করে বাংলাদেশকে ১ উইকেটে জয় উপহার দেন মিরাজ।

আরও পড়ুন: মাশরাফির পর কি এবার সাকিব?

Advertisement

পরের ম্যাচে তো মিরাজ অবিশ্বাস্য কীর্তি উপহার দিলেন। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৮৩ বলে খেললেন অসাধারণ সেঞ্চুরির এক ইনিংস। মাহমুদউল্লাহর ৭৭ এবং মিরাজের অপরাজিত সেঞ্চুরির ওপর ভর করে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৭১ রান। জবাবে ভারত থেমে যায় ২৬৬ রানে। বাংলাদেশের জয় মাত্র ৫ রানে।

যদিও শেষ ওয়ানডেতে ইশান কিশানের ডাবল সেঞ্চুরি (২১০) এবং কোহলির সেঞ্চুরির কল্যাণে বাংলাদেশকে ভারত হারিয়েছিল ২৭৭ রানের বিশাল ব্যবধানে। ভারত করেছিল ৪০৯ রান। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় ১৮২ রানে।

সবশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে দেখা হয়েছিল দু’দলের। ওই ম্যাচে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল সাকিব আল হাসানের দল। সাকিব আল হাসানের ৮০ রানের ওপর ভর করে ২৬৫ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। ভারত অলআউট হয়ে যায় ২৫৯ রানে।

ফলে আজ বিশ্বকাপের ম্যাচেও বাংলাদেশের সামনে বড় সুযোগ রয়েছে, ম্যাচ জিতে নেওয়ার। যদিও ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের ওয়ানডেতে হারানোর রেকর্ড এখনো নেই টাইগারদের। সুতরাং, সাকিবদের জন্য কাজটা কঠিনই বটে।

Advertisement

তবে, ভারতের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সাফল্যে উদ্বেলিত নন বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

হাথুরু বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে সম্প্রতি আমাদের সাফল্য রয়েছে। তবে বিশ্বকাপের খেলা ভিন্ন। এখানে অনেক কিছু হতে পারে। আমরা অবশ্যই আশা করবো, আগের সেই ম্যাচের মত সম্পূর্ণ একটি পারফরম্যান্স। ভারত, অবশ্যই এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা এবং দুর্দান্ত ফর্মে থাকা একটি দল। তাদেরকে এখনও বড় কোনো পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়নি। আমরা যদি আমাদের সম্ভাবনার পুরোটা দিয়ে খেলতে পারি, তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো হবে। শুরুটা ভালো করতে চাই আমরা।’

ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে একটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাও ১৬ বছর আগে, ২০০৭ সালে ত্রিনিদাদে। ওই আসরের মাধ্যমেই বিশ্বকাপ ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের। ২০০৭ সালের পর আরও তিনবার বিশ্বকাপে দেখা হয়েছিল দু’দেশের। সবকটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: আমি ভাগ্যবান যে কোহলিকে ৫ বার আউট করেছি: সাকিব

এবারের বিশ্বকাপে ভারত এখন পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ খেলেছে ভারত। তিনটিতেই জয় পেয়েছে রোহিত শর্মার দল। প্রথম ম্যাচে হারিয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। দ্বিতীয় ম্যাচে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তুলে নিয়েছে সহজ জয়। সর্বশেষ আহামেদাবাদে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে দাঁড়াতেই দেয়নি স্বাগতিকরা, হারিয়েছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে।

আজ পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের অভিজ্ঞতা ভালো কাজে দিতে পারে। এবারের বিশ্বকাপে মুশফিকুর রহিম এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে দুটিতে ফিফটি করেছেন। নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের একটি করে দুর্দান্ত ইনিংস রয়েছে।

দলের প্রয়োজনে কার্যকরী ব্যাটার হিসেবে দেখা যেতে পারে মেহেদি হাসান মিরাজকে। এছাড়া বিশ্বকাপের আগে চলতি বছর ৫০০ রান করা ব্যাটার তাওহিদ হৃদয় থাকছেন মিডলঅর্ডারে। ভারতের বিপক্ষে সবসময় ভালো খেলা সিনিয়র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ভরসা জোগাতে পারেন সাকিবদের।

পেস আক্রমণে এবার বাংলাদেশ আগের যে কোনো আসরের চেয়ে শক্তিশালী। দলে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদের মতো বোলাররা। যদিও এখন পর্যন্ত বল হাতে তেমন কোনো ঝলক দেখাতে পারেননি তাসকিন। হাসান মাহমুদ এখনো মাঠে নামতে পারেননি।

আরও পড়ুন: একাদশ নির্বাচন আর গেমপ্ল্যান হোক নিজ শক্তি ও সামর্থ্যে মানানসই

ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা তাসকিন আহমেদ যেকোনো সময় ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, এ প্রত্যাশা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। সাকিব-মিরাজরা যদি ঘূর্ণিতে কাবু করতে পারেন কোহলিদের, তাহলে নিশ্চিত ভারতের বিপক্ষে এ বছর ব্যবধানটা ৪-১ হতে বাধ্য। হয়ে যাবে।

আইএইচএস/