সুনাম, সুখ্যাতি, অভিজ্ঞতা, ইতিহাস, পরিসংখ্যান সব হিসেব নিকেশ ও রেটিং-র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তান আর নেদারল্যান্ডস এরই মধ্যে একটি করে রাঘব বোয়াল শিকার করে ফেলেছে।
Advertisement
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ২৮৪ রান করে ইংলিশদের বিরাট ব্যবধানে হারিয়ে নজর কেড়েছে আফগানরা। আর গতকাল মঙ্গলবার ২৪৫ রান করেও আকাশে উড়তে থাকা প্রোটিয়াদের মাটিতে নামিয়ে এনেছে ডাচরা। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো বড় দলকে হারাতে পারেনি। কী করলে, কেমন ছক কষে আগালে সাফল্য ধরা দেবে? টিম কম্বিনেশনটা কেমন হলে আবার জয়ের পথ খুঁজে পাবে সাকিবের দল? তা নিয়েও চলছে রাজ্যের কথাবার্তা। বাংলাদেশ ওই দুই জয়ে আশাবাদী হতেই পারে। আফগান ও ডাচদের জয়কে আলোকবর্তিকা ভাবতেই পারে সাকিব বাহিনী। ওই খেলা দুটোর চালচিত্রে আছে একটি বড় বার্তা। তাহলো, বড় দলকে হারাতে হলে ৩০০-৩৫০ রান করতেই হবে, এমন কথা নেই।
৩০০‘র কম আড়াইশোর আশপাশ থেকে ২৮০+ স্কোর গড়েও জেতা সম্ভব। বোলিংটা হতে হবে মাপা, নিঁখুত। পেসারদের সঙ্গে স্পিনারদের সংমিশ্রণটাও দরকার। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তো সেই কাজগুলো করতে পারেনি। কী করে পারবে? বাংলাদেশের তো গোড়ায় গলদ! টিম কম্বিনেশনই ঠিক না। ওপেনিং জুটি বার বার ব্যর্থ। শুরুর পর পরই ভেঙে যাচ্ছে।
এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবালের বদলে শেষ মুহূর্তের সংযোজন তানজিদ তামিম প্রথম ২ খেলায় ব্যর্থ (১ ও ৫) হওয়ার পরও তাকে জোর করে খেলানো হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচেও রান পাননি এ বাঁহাতি তরুণ। ফিরে গেছেন ১৬ করে।
Advertisement
ইংল্যান্ডের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচে পঞ্চাশের ঘরে (৭৬) পা রাখলেও বাকি দুই খেলায় রান খরায় ভুগেছেন অপর ওপেনার লিটন দাসও।
প্রথম ম্যাচটি ছাড়া ব্যাটে রান নেই নাজমুল হোসেন শান্ত, অধিনায়ক সাকিব আর তাওহিদ হৃদয়ের। মুশফিক মিডল অর্ডারে একা লড়ছেন। বেশিরভাগ ব্যাটারের ব্যাট কথা বলছে না। রান নেই। তাই স্কোরবোর্ডের অবস্থাও জীর্ণশীর্ণ। ওদিকে ভেবেচিন্তে দল না সাজানোয় বোলিং লাইনআপটাও অবিন্যস্ত। দলে কোনো ব্যাকআপ বোলার নেই। প্রায় বোলিং ছেড়ে দেওয়া মাহমুদউল্লাহকে ৬ নম্বর বোলিং অপশন ভেবে ৫ স্পেশালিস্ট বোলার দিয়ে একাদশ সাজানো হচ্ছে। সেখানে আছে বড় ধরনের অসঙ্গতি।
তিন পেসার তাসকিন, শরিফুল ও মোস্তাফিজের সাথে স্পিনার মোটে দুজন- সাকিব আর মিরাজ। স্কোয়াডে থাকা অফব্রেক শেখ মেহেদি আর বাঁহাতি অর্থোডক্স নাসুম থাকছেন সাইডবেঞ্চে। একটি রদবদলেই একাদশের অসঙ্গতি দূর করা সম্ভব। এখনো নিজেকে মেলে ধরতে না পারা ওপেনার তানজিদ তামিমের বদলে লিটন দাসের সাথে মেহেদি মিরাজ ওপেন করলেই ‘ল্যাঠা চুকে’ যায়। তখন একাদশের গঠন বিন্যাসটাও হবে সুন্দর। তিনে শান্ত, চারে অধিনায়ক সাকিব, পাঁচে মুশফিক, অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকে সাত থেকে ছয়ে নিয়ে তরুণ তাওহিদ হৃদয়কে সাতে নামানো যাবে।
আট নম্বরে শেখ মেহেদি কিংবা নাসুম। তাতে করে তিনজন স্পেশালিস্ট স্পিনার হয়ে গেলো। যা কেবল ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচেই ছিল। আর সঙ্গে যুক্ত হবেন ৩ পেসার। দুই অলরাউন্ডার সাকিব-মিরাজকে পুরোদস্তুর ব্যাটার ধরলে একাদশে ৭ ব্যাটারের সাথে থাকবেন ৬ বোলার।
Advertisement
প্রতিপক্ষ দলে ডান হাতি ব্যাটারের সংখ্যা বেশি থাকলে পেস ও স্পিনার কোটায় বাঁহাতি বোলারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর বাঁহাতি ব্যাটারের আধিক্য হলে শরিফুল-মোস্তাফিজ দুই বাঁহাতি পেসার থেকে একজন কমিয়ে হাসান মাহমুদ না হয় তানজিম সাকিবকে খেলানোই হবে যুক্তিযুক্ত। আর একই অবস্থায় মিরাজের সাথে অফস্পিনার শেখ মেহেদির অন্তর্ভুক্তিটাও হবে লাগসই।
দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রথম তিন খেলায় এমন সাজানো গোছানো দল ছিল না। শুধু একাদশ নির্বাচন আর ব্যাটিং অর্ডারে ভুলই নয়, বোলিং লাইনআপটাও সাজানো নয়। তাতে দূরদর্শিতার অভাব পরিষ্কার। ক্রিকেটীয় যুক্তির লেশমাত্র নেই।
খেলা হচ্ছে ভারতে। বেশির ভাগ উইকেটই ব্যাটিং সহায়। আবার কিছু উইকেট একটু স্লথ। বল ব্যাটে আসে একটু দেরিতে। একটু আধটু টার্নও করে। চেন্নাই, দিল্লি আর ধর্মশালার পিচ ঠিক তেমন। সেখানে নিজেদের বোলিং শক্তির কেন্দ্রবিন্দু স্পিন শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার হতে পারতো সাফল্যর অন্যতম পূর্বশর্ত।
কিন্তু বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট ও থিংক ট্যাঙ্ক এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি। উল্টো ৩ পেসারের সাথে ২ স্পিনার খেলিয়ে ভুল পথে হেঁটে সর্বনাশ ডেকে এনেছে।
ভারতের সাথে খেলার আগে টিম ম্যানেজমেন্ট সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজেদের সত্যিকার শক্তি ও সামর্থ্যর কথা মাথায় রেখে দল সাজাবেন, গেম প্ল্যানটাও হবে ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের’-সেটাই প্রত্যাশা।
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস