গাজা থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনিরা যে সংকীর্ণ উপত্যকায় আশ্রয় নিয়েছেন, সেই এলাকার চারপাশ অবরুদ্ধ এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে বাকি বিশ্ব থেকে। যেখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা নাই, নাই নিরাপত্তা। যে বিপুল সংখ্যক গাজাবাসী এই জায়গায় জড়ো হয়েছেন, তাদের অনেকে ইতোমধ্যে বোমা হামলায় তাদের পরিবার-পরিজন, বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন, নিঃস্ব হয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত আতঙ্কের সাথে বসবাস করছেন। তাদের প্রত্যেকেরই দরকার আশ্রয়, পানি, খাবার ও ওষুধ। এই অসহায় মানুষের সংখ্যা এতোটাই বেশি হয়েছে যে সবকিছু ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিন ধরে গাজায় যে হামলা চলছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ ও অমানবিক।
Advertisement
অথচ যেসব দেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ও যারা মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশকে বুদ্ধি-পরামর্শ দেয় অথবা শাসায়, তারা কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে নেই। এই দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের ওপর হওয়া এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। গণতান্ত্রিক দেশ বলে পরিচিত এই বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলো নিজ নিজ সরকারের নীতি অনুযায়ী মুখ নাও খুলতে পারে। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, তারা দেশের কাউকেই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অনুমতি দিচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও চলমান সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সব ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স সরকার। একই সাথে এই নিয়ম না মানলে বিদেশি নাগরিকদের ‘পরিকল্পিতভাবে’ ফ্রান্স ত্যাগ করানো হবে বলে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের অবস্থানও ফ্রান্সের মতোই। ব্রিটেনের রাস্তায় ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শনের বিষয়ে পুলিশ প্রধানদের একটি সতর্কতা জারি করেছেন। অন্যদিকে জার্মানির রাজধানী বার্লিনেও প্যালেস্টাইনপন্থি বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। দেশটির ধারণা, এতে ইহুদি বিদ্বেষ এবং সহিংসতার সৃষ্টি হতে পারে।
ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হামাস ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে কি ফিলিস্তিনের অগণিত সাধারণ মানুষের ওপর হওয়া অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না? কোনো দেশের সরকার না চাইলে বলবে না, কিন্তু দেশের মানুষ যার পক্ষে ইচ্ছা কথা বলবে, এটাইতো গণতন্ত্রের নিয়ম, তাই না? আমাদেরতো সেরকমই শিক্ষা দেওয়া হয়।
Advertisement
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ চলমান পরিস্থিতিতে নিজ দেশের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিভাজনকে কেন্দ্র করে নিজ দেশের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি না করি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, চলমান সংঘাত কেন্দ্র করে ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষ বৃদ্ধির আশঙ্কায় সরকারগুলো এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের সর্বাত্মক সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। তাইতো ফরাসি একজন নাগরিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা নাগরিকরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। সবার বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে। সেক্ষেত্রে এক পক্ষকে অনুমতি দিয়ে আরেক পক্ষকে নিষিদ্ধ করা খুবই অন্যায্য।’ ফ্রান্সে একপক্ষ মনে করে যে, ফ্রান্স সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
গণতান্ত্রিক এই দেশগুলোতেও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করতে হয়েছে মানুষকে। বিক্ষোভকারীরা যখন ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ‘ফিলিস্তিনের জয় হবে’ ও ‘ইসরায়েল হত্যাকারী’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দিতে থাকেন, তখন টিয়ারগ্যাস ছুড়ে ও জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় ফ্রান্সের দাঙ্গা পুলিশ। একইসাথে কমপক্ষে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কয়েকশ প্রতিবাদকারী রাস্তায় নেমে আসে। তবে কাউকে গ্রেফতর করা হয়নি। কারণ পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা সুশৃঙ্খল এবং আইনানুগ আচরণ করেছে। তবে পুলিশের হুমকি ছিলই। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশপ্রধান সমাবেশের আগে বলেছিলেন, পুলিশ এ সমাবেশের জন্য ‘চরম ক্ষমতা’ ব্যবহার করবে, যা ২০০৫ সালে ক্রোনুলা দাঙ্গার সময় প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল।
ম্যাক্রোঁ সাহেব মনে করেন ‘সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে আত্মরক্ষার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। কিন্তু বেসামরিকদের জীবন রক্ষা করতে হবে। কেননা এটা গণতন্ত্রের কর্তব্য।’ অবশ্য উনি এটা মনে করেন না যে, সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার ফিলিস্তিনিদেরও রয়েছে। সেখানকার বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এই মতের পক্ষে। গাজার হাসপাতালগুলোর মর্গে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তাদের খুব একটা কাতর করছে বলেও মনে হচ্ছে না।
Advertisement
উল্লেখ্য, ফ্রান্সে প্রায় ৫ লাখ ইহুদি লোকের বসবাস। অন্যদিকে ইউরোপে মুসলমানদেরও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক বাস করে ফ্রান্সে, যা প্রায় ৫০ লাখের কাছাকাছি। এরপরেও ফ্রান্স সরকারের মাথাব্যথা শুধু ইহুদিদের নিয়ে। গণতন্ত্র শেখানোর সময় এই দেশগুলো বলে যে, সব নাগরিককে সমানভাবে দেখা গণতন্ত্রের কর্তব্য।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে পশ্চিমাদের ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র নতুন রূপ দেখছি আমরা। বুধবার ইসরায়েলে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই সময়ে ইসরায়েলে বাইডেনের সফর মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদর্শন করবে বলে অনেকেরই ধারণা। বাইডেন এমন সময়ে ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন যখন গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে আগ্রাসন আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা ইতোমধ্যে গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। আমরা বলতে চাইছি না যে গাজা শাসনকারী হামাস গোষ্ঠী যে হামলা চালিয়েছে দক্ষিণ ইসরায়েলের শহরগুলোতে, তা যুক্তিযুক্ত হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে ইসরায়েল যা করছে বা করেছে তা ভয়াবহ।
ইসরায়েলের সমালোচনাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পশ্চিমের সরকারগুলো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যে ‘প্যালেস্টাইনের পতাকা উড়ানো’ কিংবা তাদের পক্ষে কোনো বক্তব্য বা স্লোগানকে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কানাডা থেকে সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর লিখেছেন, কানাডায় প্রভিন্সিয়াল একজন এমপিকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে, এয়ার কানাডার একজন পাইলট চাকরিচ্যুত হয়েছেন, ফেডারেল সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। একজন ইউনিয়ন নেতার ওপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এরা সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্যালেস্টাইনিদের ওপর নির্মমতার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হচ্ছে কেবল ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলা। ইসরায়েলের মিত্র রাষ্ট্রগুলো সবাই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কখনো কথা কথা বলেনি। নিন্দা করেনি ফিলিস্তিনি নাগরিক হত্যার। সিরিয়া ও গাজার শিশুদের রক্তাক্ত দেহ তাদের কাঁদায়নি কখনো।
অন্যদিকে বাংলাদেশসহ অন্য মুসলিম দেশগুলো সবসময় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এলেও বড় ধরনের সংকট এলে পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কেমন যেন নড়বড়ে অবস্থান নেয়। এমনকি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগও ইসরায়েলের সাথে সংকটকালে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে খুব জোরালো কোনো ভূমিকা নিতে পারে না। মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে ইরান ছাড়া আর কোনো দেশকেই কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। মুসলিম বিশ্বের জনগণ বরাবরই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে হলেও, মুসলিম দেশগুলো প্রায় সবাই চুপচাপ। কারণ তাদের পশ্চিমা তোষণ নীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন গণতন্ত্র এবং প্রতিনিধিত্বশীল সরকার মুসলিম বিশ্বে খুবই কম। এ ধরনের দেশগুলোর সরকারকে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয় বলে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বে প্রভাবশালী আরব দেশগুলোর কেউ কেউ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে, আবার কেউ কেউ স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় আছে। নিজেদের ক্ষমতা তারা চিরস্থায়ী করে রাখতে চায়। সংগত কারণেই তারা হয়তো মনে করে পপুলার সেন্টিমেন্ট যাই হোক ইসরায়েলকে ঘাঁটানো তাদের ঠিক হবে না। এ কারণেই তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত দেখা যায় না। (বিবিসি বাংলা)
সংযুক্ত আরব আমিরাত হামাসের হামলার সমালোচনা করেছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার বিষয়টি সেখানে আসেনি। সৌদি যুবরাজ বলেছেন তার দেশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে থাকবে। বাহরাইন হামাসের হামলার সমালোচনা করেছে। আর কুয়েত ও ওমানের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটাই কৌশলী। সিরিয়া অবশ্য হামাসের হামলাকে বড় অর্জন বলেছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি বিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশ অবস্থান বলিষ্ঠ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলে যে তখনও পশ্চিমা ও আরববিশ্ব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সাপোর্ট করেনি, বরং বিরোধিতা করে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তার পক্ষে ছিল। পশ্চিমা জনগণের একটি অংশ যদিও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে ছিল, কিন্তু মুসলিম বিশ্ব তখনও শক্ত অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বল ছিল, এই পশ্চিমা তোষণ নীতির কারণেই।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেনের একটি লেখার অংশবিশেষ এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, “চীন নিয়ে মার্কিন অবসেশনের বলি হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ। চীন-মার্কিন যোগাযোগের প্রাথমিক দৌত্যকরণের দায়িত্ব পালন করেছিল পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। আর এর বিনিময়ে হেনরি কিসিঞ্জার এবং তদানীন্তন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশে ঘটমান গণহত্যা বন্ধে কোনো প্রয়াস তো নেয়ইনি বরং দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়ে গেছে গণহত্যাকারীদের। বাংলাদেশের সৃষ্টিতে নিজের নৈতিক পরাজয়ের শোধ নিয়েছিলেন কিসিঞ্জার সদ্য স্বাধীন দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়ে। ১৯৭৪ সালে পিএল ৪৮০ এর গমসরবরাহ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষে আরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার।”
আমরা যারা মনে করি পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ধারক-বাহক। তারা আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেবে, তারা ভুল মনে করি। এই শক্তি সবসময় নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবেই অন্য ছোট রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা দেয়, গণতন্ত্রের কথা বলে। এতগুলো বছরে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বুঝেছি যে পশ্চিমারা যাতে উপকৃত হবে বলে মনে করে, তারা শুধু সেই ইস্যুতেই ছাতা ধরে।১৭ অক্টোবর, ২০২৩ লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট।
এইচআর/ফারুক/এএসএম