দেশজুড়ে

মঙ্গলবার কুষ্টিয়ায় বসছে ৩ দিনের সাধুর হাট

বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন শাহের ১৩৩তম তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে সাধুর হাট বসছে। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) থেকে তিন দিনের এ সাধুর হাট বসবে। এ উপলক্ষে আখড়াবাড়ি বাউল-সাধু আর ভক্তদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

Advertisement

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে তিরোধান পালন উপলক্ষে আখড়াবাড়িতে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই অমর বাণী ধারণ করে সত্য সু-পথের সন্ধানে মানবতার দীক্ষা নিতে এরই মধ্যে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের হাজারো সাধুগুরু ও ভক্ত দলে দলে এসে আসন পেতে বসেছেন লালন সাঁইজির আখড়ায়।

বাউল সম্রাটের ১৩৩তম তিরোধান দিবসের এবারের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে তিন দিনব্যাপী। মূল উৎসব শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছেন সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। সাধু-ভক্তদের পদচারণায় জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি।

কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে একটানা ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন শাহের ১৩৩তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চলবে। আখড়াবাড়িতে মঞ্চ ও লালন মেলার স্টল নির্মাণ এবং মাজার ধোয়া মোছার কাজ শেষ করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে।

Advertisement

এদিকে সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি এহেতেশাম রেজা।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে লালন একাডেমি। এছাড়া এ উৎসব নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ আয়োজন ঘিরে ছেউড়িয়ায় মরা কালিগঙ্গা নদী তীরের লালন আখড়াবাড়িতে এখন সাজ সাজ রব। আলোচনা সভা ও সঙ্গীতের জন্য নির্মাণ হয়েছে বিশাল মঞ্চ। তিনদিনের এ উৎসবে যোগ দিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আখড়াবাড়িতে ছুটে এসেছেন সাধু-গুরু, বাউল, ভক্তরা।

বিগত বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই সাধু-গুরুদের ভিড় বেড়েছে। লালন একাডেমির নির্ধারিত স্থানে তারা ছোট দলে ভাগ হয়ে দরদ ভরা গলায় গেয়ে চলেছেন লালনের গান। আবার কেউ বা মেতে উঠেছেন গুরুবাদী বাউল ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব কথার আলোচনায়। এসেছেন দেশ বিদেশের নানা বয়সী দর্শনার্থীরাও।

Advertisement

তিরোধান দিবস উদযাপন করতে আখড়াবাড়িতে রং করা, ধোয়া-মোছা এবং ভরাট করা কালী নদীর বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা হরেক রকমের পণ্য নিয়ে মেলার পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

বাউল ভক্তরা জানান, হৃদয়ের টানে প্রতি বছর এখানে ছুটে আসেন তারা। লালনের অহিংসার বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারলেই কেবল সব আয়োজন সার্থক হবে বলে মনে করেন তারা।

আল-মামুন সাগর/এসজে/এমএস