দেশজুড়ে

গরিবের হোটেলের ৪০ টাকার খাবার এখন ১০০

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌরবাজারে ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করেন আমিনুল ইসলাম (৪৫)। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট হলেও বছর দশেক ধরে এখানে থাকছেন। কয়েকজন মিলে ব্যাচেলর বাসায় থাকেন। তাই তাকে বাধ্য হয়ে খাবার খেতে হয় হোটেলে। আগে ৪০ টাকার খাবারে পেট ভরে খাওয়া যেতো। এখন ১০০ টাকার খাবারেও পেট ভরছে না। এক বছরের ব্যবধানে খাবারের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

Advertisement

আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আগে ৪০-৫০ টাকায় পেট ভরে ভাত খেতে পারতাম। এখন ৯০-১০০ টাকার খাবারেও পেট ভরে না। মাছ-মাংসতো দূরের কথা। গত এক বছরের ব্যবধানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় হোটেল মালিকরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবস্থিত হোটেলগুলোতে খাবারের দাম বেড়ে গেছে। গরিবের হোটেল খ্যাত ছোটখাটো দোকানে পেট ভরে ভাত খেতে পারছেন না স্বল্প আয়ের মানুষগুলো।

কথা হয় বারইয়ারহাট আল্লাহর দান ভাতঘরের মালিক দ্বীন মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গরুর মাংস সিঙ্গেল (৪ টুকরো) ১২০ টাকা। একপিস মুরগি ১০০ টাকা, লইট্টা মাছ ৭০ টাকা, সবজি ৩০ টাকা, এক প্লেট ভাত ২০ টাকা। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি। তারপরও আগের মতো লাভ হয় না।

Advertisement

দ্বীন মোহাম্মদ আরও বলেন, গত ২০ বছর ধরে দেখছি, একটা সময় মানুষ ৩০ টাকায় পেট ভরে ভাত খেতে পারতো। এক বছর আগেও ৭০-৮০ টাকায় ভালো করে খাওয়া যেতো। এখন ১০০ টাকাতেও পেট ভরে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মিরসরাই পৌর সদরের মীর সাহেবের ভাতঘরের মালিক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে ভাতঘর পরিচালনা করছি। একটা সময় ৩০ থেকে ৪০ টাকায় মানুষ ভাত খেতে পারতো। হু হু করে যেভাবে জিনিসের দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের কিছু করার নেই। বেচাকেনাও আগের চেয়ে কমে গেছে। আমার এখানে ২০ টাকায় আনলিমিটেড ভাত। লইট্টা মাছ-ভাত ১২০ টাকা, রুই মাছ-ভাত ১৩০ টাকা, গরুর মাংস-ভাত ১৮০ টাকা, ডিম-ভাত ৫০ টাকা। এখন ১৫০ টাকার নিচে পেট ভরে ভাত খাওয়া সম্ভব না।

জানা গেছে, উপজেলার কমলদহ এলাকায় ড্রাইভার হোটেলে একসময়কার ৮০ টাকার গরুর মাংস এখন ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের জন্য এ হোটেল বিখ্যাত। এখন আর কম ও স্বল্প আয়ের মানুষের গরুর মাংসের স্বাদ নেওয়া হয় না। আগে একসময় হোটেলে পানি ফ্রিতে দেওয়া হতো। এখন আলাদা করে পানির দামও নেওয়া হচ্ছে।

মিরসরাই পৌর সদরের আলিফ হোটেলে ভাত খেতে আসা রিকশাচালক তাজুল ইসলাম বলেন, এখন ভাত খেতে অনেক টাকা লাগে। ১০০ টাকার নিচে ভালো করে ভাত খাওয়া যায় না। সারদিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। তার মধ্যে দুপুরে হোটেলে ভাত খেতে ১০০ টাকা চলে গেলে আর কত টাকা থাকে?

Advertisement

কথা হয় করেরহাট বাবুর্চি হোটেলের মালিক নুর মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে যারা খেতে আসেন, তাদের আর আমাদের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। উভয় পক্ষই কম টাকা কামাই। তাই কম টাকায় খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, সকালে যখন হোটেলের জন্য বাজার করতে যাই তখন সবচেয়ে কমদামি সবজি কিনতে গেলেও কেজিতে একশো টাকা গুনতে হয়। আমরা বাধ্য হয়ে দাম বাড়াই। তা না হলে ভাত বিক্রি বন্ধ করে ভিক্ষার থালা নিয়ে বসতে হবে।

এফএ/এমএস