দক্ষিণ চীন সাগর হয়ে আসা ঝেন হুয়া ১৫ নামের একটি জাহাজ নোঙর করার মাধ্যমে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ভারতের সর্বদক্ষিণের সমুদ্রবন্দর ‘ভিজিনজাম’। আর এর মধ্য দিয়েই ট্রান্সশিপমেন্ট কনটেইনার পোর্টের জগতে প্রবেশ করবে ভারত। অর্থাৎ কেরালায় অবস্থিত এ বন্দরে বিভিন্ন দেশের জাহাজ নোঙর করে তেল ভরাটসহ অন্যান্য পণ্য এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজে উঠাতে পারবে।
Advertisement
ব্লুমবার্গকে উদ্ধৃত করে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, রোববার (১৫ অক্টোবর) এই বন্দর চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যে নিজেদের অংশীদারত্ব আরও বাড়াতে পারবে, বর্তমানে যেখানে চীনের বিশাল আধিপত্য রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের বিকল্প হয়ে উঠতে চাইছে ভারতে। আর ভিজিনজাম বন্দর বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া এ বন্দরের ফলে ভারতে কার্গো জাহাজ চলাচলের ব্যয়ও কমে যাবে।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, এই বন্দর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির রাজত্বে আরও একটি মাইলফলক যুক্ত হতে যাচ্ছে। কারণ যৌথভাবে এই বন্দর নির্মাণ করেছে আদানির মালিকানাধীন কোম্পানি ‘আদানি পোর্টস’।
Advertisement
বলা হচ্ছে, ভিজিনজামের ভৌগোলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথের পাশে এ অঞ্চলের অবস্থান, সেই পথে বিশ্বের ৩০ শতাংশ কার্গো জাহাজ চলাচল করে। আবার এই বন্দরের গভীরতা ২৪ মিটারের বেশি। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজগুলোও এখানে অনায়াসে ভিড়তে পারবে। এত দিন ভারতের বন্দরগুলোর গভীরতা কম থাকায় বড় বড় আন্তর্জাতিক জাহাজ কলম্বো, দুবাই ও সিঙ্গাপুরের বন্দরে নঙর করতো।
এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জাহাজ পরিবহনের সক্ষমতা কম থাকায় এত দিন ভারতের বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের বন্দর মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০ সালে ভারতে কনটেইনার ওঠানামা হয়েছিল মাত্র ১৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৭০ লাখ টিইইউ, যেখানে চীনের হয়েছিল ২৪ কোটি ৫০ লাখ টিইইউ।
মুম্বাইয়ের টিসিজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা চকরি লোকপ্রিয় ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের ৫০ ভাগ ভারত মহাসাগর দিয়ে হয়। ভিজিনজাম বন্দরের প্রাকৃতিক সুবিধার কারণে বড় জাহাজগুলো আকৃষ্ট হবে। তাতে আদানি পোর্ট অর্থাৎ গৌতম আদানির যে সংস্থা এই বন্দর নির্মাণ করেছে, তার মুনাফা অনেক বাড়বে।
আদানি পোর্টের ওয়েবসাইটের সূত্রে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, এই বন্দরে জাহাজগুলো যেমন দ্রুত ভিড়তে পারবে, তেমনি সেখান থেকে দ্রুত ঘুরেও যেতে পারবে। বিশ্বের বৃহত্তম মেগাম্যাক্স কনটেইনার জাহাজও এই বন্দরে ভিড়তে পারবে। প্রথম ধাপে এই বন্দরের সক্ষমতা হবে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ টিইইউ-পরবর্তী পর্যায়ে এখানে আরও ৬২ লাখ টিইইউ সক্ষমতা যুক্ত হবে।
Advertisement
এদিকে, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম নদী বন্দর হিসেবে ২৫ বছর উদযাপন করেছে ভারতের আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন মুন্দ্রা বন্দর। গুজরাটের কচ্ছ উপকূলে ১৯৯৮ সালের ৭ অক্টোবর এমটি আলফা নামের প্রথম জাহাজ নোঙর ফেলার পর থেকে এ বন্দরের ধারাবাহিক যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি শক্তিশালী করার মাধ্যমে মুন্দ্রা বন্দর একটি ‘মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্ট হাবে’ পরিণত হয়েছে।
গত ২৫ বছরে রাজ্য সরকার ও জাতীয় কোষাগারে এর অবদান প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা, যা ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া মুন্দ্রা বন্দর এ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
১৯৯৮ সালে চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের বেসরকারি বৃহত্তম বন্দর হিসেবে মুন্দ্রা বন্দর সর্বোচ্চ ১৫৫ মিলিয়ন ম্যাট্রিক টন হ্যান্ডেল করে, যা ভারতের সামুদ্রিক কার্গোর প্রায় ১১ শতাংশ। এছাড়া, ভারতের ৩৩ শতাংশ মালবাহী কনটেইনার চলাচলের এক্সিম গেটওয়ে হিসেবেও কাজ করে ৩৫ হাজার একরের এ বন্দর।
মুন্দ্রা বন্দর সম্পর্কে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বলেন, এ বন্দর সমগ্র আদানি গ্রুপের জন্য সম্ভাবনাময় দিগন্তের সূচনা করেছিল। ২৫ বছর আগে যখন এর যাত্রা শুরু হয়, তখন একটি বাতিঘরের স্বপ্ন দেখেছিলাম যা ভারতের অগ্রযাত্রাকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এই প্রতিশ্রুতি পূরণের স্বপ্ন শুধু মুন্দ্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা এ পথচলায় আস্থা রাখা দেশের প্রতিটি স্টেকহোল্ডারের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। রজত জয়ন্তীতে মুন্দ্রা দূরদর্শিতা, দৃঢ়তা ও ঐক্যবদ্ধতার এক বিস্ময়কর প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড প্রধান নির্বাহী পরিচালক (সিইও) ও হোল টাইম ডিরেক্টর (ডব্লিউটিডি) করণ আদানি বলেন, বিশ্বমানের অবকাঠামো হিসেবে মুন্দ্রা বন্দর আজ অনন্য উচ্চতায় দাঁড়িয়েছে। মাত্র ২৫ বছরে আমরা এটির বহুমাত্রিক রূপান্তরের সাক্ষী হয়েছি। এটি ভারতের এক্সিম গেটওয়ে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি অসাধারণ গ্লোবাল হাব হিসেবে অবদান রেখে চলেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ