বিনোদন

সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন দর্শক, কেউ হয়েছেন বাগরুদ্ধ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তুলে ধরেছে চলচ্চিত্রের পর্দায়। সেসব দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাদের জীবনী সুনিপুণভাবে সিনেমায় উঠে এসেছে। এ ধরনের একাধিক সিনেমা হলিউড ও বলিউডসহ বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা গেছে।

Advertisement

এসব ঐতিহাসিক সিনেমা বেশ দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছে। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন সিনেমা নির্মিত হয়নি। এবার ঢাকাই চলচ্চিত্র তেমনই একটি ঐতিহাসিক সিনেমা পেয়ে পূর্ণ করেছে তার আজন্ম শূন্যস্থান। সিনেমাটির নাম‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।

আরও পড়ুন: একনজরে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণের দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সরকার জাতির পিতাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেয়।

Advertisement

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’সিনেমাটি নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দেশের সিনেমাপ্রেমীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়।

করোনা মহামারিসহ কিছু কারণে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’সিনেমাটি নির্মাণে কিছুটা বিলম্ব হয়। কিন্তু সিনেমাটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ ক্রমেই বাড়তে থাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি হয়।

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’সিনেমাটি নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও কৌতূহল থাকার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য কারণ হচ্ছে- সিনেমাটি দেশের জাতির পিতাকে নিয়ে নির্মিত, এটি নির্মাণ করেছেন বলিউডের নামজাদা চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। অন্যদিকে এই সময়ের জনপ্রিয় তারকারা এ সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

সঙ্গত কারণে সবাই ধরে নিয়েছিলেন সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে দর্শকদের ঢল নামবে। সবার সেই ধারণাই বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে গতকাল (১৩ অক্টোবর)।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি দেখে পরিশেষে সবাই কাঁদবেন: ফজলুর রহমান বাবু

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’সিনেমা মুক্তির প্রথম দিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে বিভিন্ন বয়সী, শ্রেণি ও পেশার মানুষ সিনেমা হলে এসেছেন। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিনেমাটি উপভোগ করেছেন।

সিনেমাটি দেশের ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এ দিন ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সিনেমা দেখে একজন অন্যজনের সঙ্গে ছবির বিভিন্ন দৃশ্য নিয়ে আলোচনা করছেন।

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

কোনো দর্শক সাংবাদিকদের সঙ্গে সিনেমা দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন। আবার কেউবা এ সিনেমায় অভিনয়শিল্পীদের কাছে পেয়ে ছবি তোলায় মেতেছেন। বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে পল্লবী থেকে আসা রবিন নামে এক যুবকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুরা মিলে সিনেমা হলে সিনেমা দেখতাম। সম্প্রতি বেশ কয়েকটা সিনেমা আমরা স্টার সিনেপ্লেক্সে দেখেছি। আজও পাঁচজনের একটা টিম এসেছি। ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি দেখতে।

বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রথম শো হয় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে, দ্বিতীয় শো বিকেল ৩টায় এবং সন্ধ্যা ৭টায় তৃতীয় শো। সন্ধ্যা ৬টায় দর্শকের সামনে হাজির হন সিনেমাটির বঙ্গবন্ধু চরিত্রের অভিনেতা আরিফিন শুভ। তাকে কাছে পেয়ে অটোগ্রাফ শিকারিদের উচ্ছ্বাস অন্যরকম মাত্রা যোগ করে।

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’সিনেমার নায়ক অভিনেতা আরিফিন শুভ দর্শকের সঙ্গে ছবি তোলার আবদার মেটানোর পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। জানান তার এই সিনেমায় অভিনয়ের অনুভূতি ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতা।

‘এ সিনেমাটি আমার কাছে গর্বের একটি কাজ। আগেও বলেছি, যদি ছোট একটি চরিত্রও পেতাম আমি সিনেমাটিতে কাজ করতাম। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহানায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটা আমার জন্য গর্বের।’

সিনেপ্লেক্সের টিকিট কাউন্টারের সামনে তামান্না নামে একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা দুজন স্বামী-স্ত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করি। ভালো সিনেমার খবর পেলে ছুটির দিনে চলে আসি প্রেক্ষাগৃহে। দুজন মিলে ছবি দেখি। আজকের সিনেমাটি বিশেষ সিনেমা। এরকম একটি ঐতিহাসিক সিনেমা মিস করতে চাই না। তাই সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনই দেখতে এলাম।

সিনেমাটি দেখে বের হওয়া দর্শকদের মধ্যে আরও একটি দৃশ্য চোখে পড়েছে। হল থেকে কোনো কোনো দর্শক বের হচ্ছেন, তাদের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা সিনেমা দেখার অনুভূতি জানতে চাইছেন, কিন্তু তারা কথা বলতে চাইছেন না। কারণ তারা সিনেমাটি দেখে এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন যে, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। কারও কারও চোখের কোণে জল দেখা গেছে।

বেসরকারি একটি বিশ্বদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র মাহিদুল রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সিনেমাটিতে সত্য গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যা দেখে কোনো দর্শক আঁতকে উঠেছেন। কেউ কেঁদেছেন। এভাবে মানুষ মানুষকে হত্যা করতে পারে! যিনি দেশটা স্বাধীন করেছেন তাকে এভাবে মরতে হয়েছে। তাই মনে হয়- কেউ কথা বলতে পারছে না।

গত বৃহস্পতিবার সকালে এ সিনেমার প্রিমিয়ার প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে প্রিমিয়ার শো হয়। সিনেমাটি ভারতে মুক্তি পাবে আগামী ২৭ অক্টোবর। দেশে মাল্টিপ্লেক্স হলের পাশাপাশি সিঙ্গেল স্ক্রিন হলগুলোতেও প্রদর্শন হচ্ছে সিনেমাটি।

এমআই/এমএমএফ/এমএস