দেশজুড়ে

হোটেল মালিক-কারিগরে টিকে রয়েছে মনসুরি মিঠাই

নীলফামারীর সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মনসুরি মিঠাই। উপজেলার যেখানেই যাবেন দেখা মিলবে বাহারি রঙের মিষ্টান্ন মনসুরি। অনন্য স্বাদের এ মনসুরি মিঠাই নিতে দূর-দূরান্ত থেকে সৈয়দপুরে ছুটে আসেন মানুষ।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনসুরি মিঠাই প্রথম দিল্লীতে তৈরি হয়েছিল। মোঘল সালতানাতে স্বাস্থ্যকর এ মিষ্টান্নটি পরিবেশন করা হতো। কারিগররা যত্ন করে বিশেষ এ খাবারটি বানাতেন। আফগানিস্তানের কাবুলের একজন কারিগরের নাম ছিল মনসুর পাঠান। পরে সেই কারিগরের নামে এটির নাম হয়ে যায় মনসুর বা মনসুরি। বেসন, ছোলার ডাল আর চিনি দিয়ে বানানো এই মিষ্টি সংরক্ষণ করা যায় দীর্ঘদিন। মোঘল আমল থেকে সৈয়দপুর শহরের আনাচে-কানাচে শতাধিক রেস্তোরাঁয় মনসুরি মিঠাই তৈরি হয়ে আসছে। সৈয়দপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ মনসুরির কদর রয়েছে।

শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে অবস্থিত দিলকুশা মিষ্টি ভাণ্ডার। পাকিস্তান আমলে ওই রেস্তোরাঁটির নাম ছিল দিলকুশা সুইটমিট। এর মালিক কামরানও এসেছিলেন ভারতের বিহার থেকে। তার রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন ১০-১২ কেজি মনসুরি মিঠাই তৈরি হয়। ২০০৪ সালে মালিক কামরুদ্দিন মারা যান। এরপর ওই দোকান পরিচালনা করেন তার একমাত্র ছেলে মো. কাওসার।

আরও পড়ুন: শেরপুরের শত বছরের ঐতিহ্য ছানার পায়েস

Advertisement

দিলকুশা মিষ্টি ভাণ্ডারের ম্যানেজার তসলিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বেসন, তেল ও চিনি দিয়ে তৈরি হয় বিশেষ এ মিষ্টান্নটি। এটা খুব সুস্বাদু হয়। অনেকদিন ভালো থাকে। ছানার মিষ্টি থেকে এটা ভালো। প্রতি কেজি ২২০-২৪০ টাকা।

কারিগর আব্দুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি মনসুরি বানাই দশ বছর ধরে। বেসন, ছোলার ডাল, চিনি আর তেল দিয়ে তৈরি এটা খেতে খুব সুস্বাদু ভালো একটা খাবার। এটা অনেকে ভালোবাসে। এটা অন্য কোথাও তৈরি হয় না? শুধু আমাদের সৈয়দপুরেই তৈরি হয়। আমার ওস্তাদ আছে উনার নাম হচ্ছে বিধান চন্দ্র মোহন্ত। এর পাশাপাশি আমরা খুরমা, মালাই চপ, আনারকলি, রসগোল্লা, রসমালাই, পোড়াবালী, মিহিদানা লাড্ডু ও নিমকি থেকে শুরু করে সবকিছু আইটেম তৈরি করে থাকি।

সৈয়দপুর পালওয়ান সুইটসের মালিক সখেন ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ২২০ টাকা বর্তমান কেজি একদিন পরপর ১০-১২ কেজি বিক্রি হয়। সৈয়দপুরে প্রতিটা দোকানে পাবেন বাকি আর কোনো শহরে পাবেন না এই মনসুরি। যদিও পান এই মনসুরি না। দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ এ মিষ্টিগুলো নিয়ে যায়। শুকনো আইটেম বিধায় সেগুলো নষ্ট হয় না। কম দামের ওই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিটির উৎপাদন টিকিয়ে রেখেছি। এখনও সৈয়দপুরে শতাধিক রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ মণ মনসুরি তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: যেকোনো অনুষ্ঠানের তালিকায় থাকে ‘খন্ডলের মিষ্টি’

Advertisement

মো. হাবিবুর রহমান হাবিব নামের এক ক্রেতা জানান, মনসুরি যখন দাম কম ছিল তখন বিক্রি বেশি হতো। কিন্তু বর্তমান দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন একটু কম কিনছি। আগে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা, বর্তমানে সেটি বেড়ে ২২০-২৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সুমন কুমার ঘোষ নামে আরেক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, মনসুরি নামকরা মিষ্টি। এটা শুধু সৈয়দপুরে পাওয়া যায়। সৈয়দপুরে মধ্যে দিলকুশা একটি ঐতিহ্যবাহী পুরাতন ও নামকরা দোকান। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলে আমরা এই মনসুরি পরিবেশন করি।

সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জাগো নিউজকে বলেন, সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মনসুরি মিঠাই টিকিয়ে রেখেছেন হোটেল মালিক ও কারিগররা। দারুণ স্বাদের এ মিষ্টি আত্মীয়-স্বজন কিংবা সৈয়দপুরে কেউ বেড়াতে এলে সঙ্গে করে নিয়ে যান।

আরএইচ/জেআইএম