রাজনীতি

তলে তলে কিছুই হয়নি: মির্জা ফখরুল

তলে তলে সব হয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন। সেই বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তলে তলে কিছুই হয়নি।

Advertisement

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত গণঅনশন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, যে নেত্রী গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আজীবন ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন তিনি আজ বন্দি। আজ এ অনশনে সব রাজনৈতিক দল স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে এবং শপথ করেছে এ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরা সরকার নয়। এরা শাসক। এরা ভয়ানক দল। এরা ঘোষণা দেন বিএনপি আমাদের শত্রু। একটি রাজনৈতিক দল একথা বলতে পারে না। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না। এরা কমান্ডো কায়দায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।

Advertisement

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। আজ দেশকে বাঁচাতে হলে, অর্থনীতি বাঁচাতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন> জুস পান করিয়ে ফখরুলের অনশন ভাঙলেন অলি

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই পূজায় আমরা কোনো কর্মসূচি রাখিনি। সরকারের লোকেরা নিজেরা পূজামণ্ডপে হামলায় চালিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাবে। এগুলো তাদের অতীত ইতিহাস। তারপরও গতকাল তারা হিন্দু খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভায় হামলা চালিয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এমন কোনো কাজ নেই যে আমরা করিনি। আবেদন করেছি, সমাবেশ করেছি, আন্দোলন করেছি। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে হত্যা করার জন্য। তাকে ভুয়া মামলায় আটক করা হয়েছে। একই মামলায় আ স ম রব, মায়া চৌধুরী, হাজী সেলিমসহ সবাইকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও সময় আছে বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। যদি উনাকে বিদেশে পাঠান তাহলে তাকে যে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে তার জন্য হয়তো মাফ করে দেবো। যদি না পাঠান তাহলে এই স্লো পয়জনিংয়ের জন্য নতুন প্রজন্ম আপনাদের ক্ষমা করবে না।

Advertisement

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা কখনও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করতে দেবেন না। তাকে আটক করা হয়েছে হত্যা করার জন্য। তোমরা লাঠিসোঁটা নিয়ে রেডি থাকো। এদেশকে মুক্ত করার জন্য। আমরা কাউকে ভয় পাই না। রাজপথে যদি আঘাত আসে তা প্রতিরোধ না করতে পারি তাহলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না। আজ সাক্ষী নেই, মামলার মেরিট নেই সেসব মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিচারের নামে অবিচার হচ্ছে। আমরা আপসহীন নেত্রীর আপস কর্মী লড়াই করে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবো।

আরও পড়ুন> খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চিকিৎসকদের ভিন্নধর্মী কর্মসূচি

নজরুল ইসলাম খান বলেন, একজন মানুষ অসুস্থ হলে তার সুচিকিৎসার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দেশনেত্রীকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এবারের লড়াই বেঁচে থাকার লড়াই, সবার লড়াই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই।

আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা স্বৈরাচারী সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে আটক করে রেখেছে সেটা হতে পারে না। এরা দেশে বাকশালী শাসন কায়েম করেছে। এর বিরুদ্ধে আজ সবাই এক হয়েছে। এ অবস্থা দেশের মানুষ মেনে নিতে পারে না। এরা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। এরা যে লুটপাট ও দুর্নীতি করেছে তা শুধু দেশের মানুষ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে।

বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সারাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। এ সরকারের বিদায় করার জন্য দেশবাসী প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন শুধু নির্দেশ। নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে এমন আন্দোলন শুরু হবে যাতে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের মসনদ ভেঙে তছনছ হয়ে যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুস সালাম বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে খালেদা জিয়াকে বাঁচানো যাবে না, দেশ বাঁচানো যাবে না। দেশকে বাঁচাতে হলে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শনিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ২টায় এ কর্মসূচি শেষ হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমদ জুস পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান। অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আনোয়ার উল্লাহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জুস পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।

এর আগে অলি আহমদ বলেন, আজ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে। আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক রাখা হচ্ছে তাকে। কারণ, বেগম জিয়া বাইরে থাকলে এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আজ ৮৫ বছর বয়সেও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। আজ তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে দেশকে রক্ষা করার জন্য।

কেএইচ/এসএনআর/এমএস