গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরকাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না কোনো শিক্ষক। শিক্ষকরা না থাকলে আসে না শিক্ষার্থীরাও। ফলে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরকাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীবেষ্টিত। বর্ষা এলে নৌকায় বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাই বিদ্যালয়ে আসতে গড়িমসি করেন শিক্ষকরা। তাদের না পেয়ে আসে না শিক্ষার্থীরা।
২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টিতে আকস্মিক পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সঠিকভাবে বিদ্যালয়টি চলমান না থাকায় সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হুজ্জাজুল ইসলামকে।
বিদ্যালয়টিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত করতে এবং পাঠদান অব্যাহত রাখতে সরকারি অর্থায়নে প্রায় লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় একটি বড় নৌকা। তবু শিক্ষক উপস্থিতি একেবারে নগণ্য বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর তাই বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকে শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়টির শিক্ষক তিনজন। প্রধান শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়ায় এখন শিক্ষক দুজন। আর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫ জন। এদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ছয়জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে আছে সাতজন।
স্থানীয়রা জানান, নৌকা দেওয়ার পরও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়টি দুঃখজনক। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা যদি সঠিকভাবে মনিটরিং করতেন তাহলে হয়তো বিদ্যালয়টির এমন দুর্দশা দেখতে হতো না বলেও মত দেন তারা।
৯ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসেন দপ্তরি কাম প্রহরী মো. তাজুল ইসলাম। কিছু সময় পর টানালেন জাতীয় পতাকা। এ সময় কোনো শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীদের চোখে পড়েনি।
শিক্ষক হাজিরা খাতা ঘেঁটে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা সরকার এবং সহকারী শিক্ষক আবু তাহের মাসুদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো ছুটি নেননি। কিন্তু চলতি মাসের ৯ দিন কোনো স্বাক্ষরই করেননি শিক্ষক নুরুল হুদা সরকার। মাসের প্রথম দুদিন শিক্ষক আবু তাহের মাসুদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর পাওয়া গেলেও বাকি দিনগুলোতে অনুপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
চলতি মাসের একই সময়ে শিক্ষার্থীদেরও কোনো হাজিরা করা হয়নি। যে কটি বেঞ্চ আছে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য তাও এলোমেলো। অপরিচ্ছন্ন পাঠদানের কক্ষগুলো। দেখেই অনুমান করা যায় পাঠদান বন্ধ ছিল বেশ কয়েক মাস ধরে। অগোছালো দেখা যায় অফিস কক্ষটিও।
গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি দেখে শিক্ষকদের ফোন দিতে দেখা গেলো দপ্তরি কাম প্রহরী মো. তাজুল ইসলামকে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হেড স্যার অসুস্থ। তিনি ছুটিতে আছেন। মূলত শিক্ষকরা সপ্তাহে দু-তিন দিন আসেন বিদ্যালয়ে। নদীবেষ্টিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আসতে ভয় পায়।
চলতি মাসের ৯ দিন স্কুলে না আসার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, আমার চোখ অপারেশন হয়েছে দুদিন হলো। চিকিৎসক আমাকে নড়াচড়া করতে বারণ করেছেন। আর শিক্ষক আবু তাহেরের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারছি না।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে কাপাসিয়া ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিপন আলী জাগো নিউজকে বলেন, ৯ দিন ধরে যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কোনো অ্যাটেনডেঞ্চ না থাকে, নিঃসন্দেহে তারা অপরাধ করেছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়, কাম্যও নয়। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে আগে কেউ বিষয়টি জানায়নি। আমি জানার পর সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পেলে বিদ্যালয়টির মানোন্নয়নে ব্যবস্থা নেবো। একই সঙ্গে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। শিক্ষা কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজে/এমএস