রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরে টানা দুই সপ্তাহ দরপতনের পর গেলো সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলেছে। সপ্তাহজুড়ে সবকটি মূল্য সূচক বাড়লেও যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। এরপরও বেড়েছে বাজার মূলধন।
Advertisement
সপ্তাহজুড়ে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পরও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন চারশো কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে সাড়ে সাত পয়েন্টের ওপরে। তবে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। এরপর দেশের শেয়ারবাজারে টানা দুই সপ্তাহ মূল্য সূচক কমে। এমনকি গেলো সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসেও মূল্য সূচকের পতন হয়। তবে শেষ তিন কার্যদিবস টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকে সূচক।
এরপরও গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৬টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯১টির। আর ২১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তি থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
Advertisement
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪০৮ কোটি টাকা বা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আগের দুই সপ্তাহের পতনে বাজর মূলধন কমে ২ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
এদিকে, ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২২ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৬ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ২৫ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা দশমিক ১৩ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ।
আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৫ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৭ শতাংশ।
Advertisement
সবকটি মূল্য সূচক বাড়লেও লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪০৩ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ৩২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, জেমিনি সি ফুড, দেশবন্ধু পলিমার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, এমারেল্ড অয়েল এবং সোনালী আঁশ।
এমএএস/এসএনআর/এএসএম