ক্যাম্পাস

মান নিম্ন ভাড়া বেশি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসার ৬০ শতাংশই ফাঁকা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বর্তমানে ৪০৩ জন শিক্ষক, ৪৯৪ জন কর্মকর্তা ও ২৯০ জন কর্মচারী আছেন। এদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক বাসা আছে মাত্র ৮৫টি। বিশাল সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিপরীতে এ স্বল্প আবাসনেরও ৬০ শতাংশ বাসাই বর্তমানে ফাঁকা।

Advertisement

এস্টেট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিকে মোট সাতটি ভবনে বাসা আছে ৫৭টি। বাসাগুলোর আছে পদমর্যাদার ভিত্তিতে আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি। অন্যদিকে কর্মচারীদের জন্য টিনশেডসহ চারটি ভবনে আছে ৪৪টি বাসা। আগে কিছু খালি থাকলেও অধিকাংশ বাসায়ই থাকতেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বর্তমানে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে মাত্র ৩৪ জনের নামে বরাদ্দ আছে বাসা। বাকি ৫১টি বাসাই ফাঁকা। যা মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ। এমনকি সম্পূর্ণ খালি থাকায় সিলগালা করে রাখা হয়েছে কর্ণফুলী ও কপোতাক্ষ নামের দুটি ভবন।

আরও পড়ুন: ইবির ৩ শিক্ষার্থী স্থায়ী ও ৩ জন সাময়িক বহিষ্কার

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসাগুলোর নিম্নমান, জরাজীর্ণ অবস্থা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব, নিম্নমানের বিপরীতে অতিরিক্ত ভাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় শহরাঞ্চলের বাইরে হওয়ায় ছেলেমেয়েদের পড়ানোর ভালো স্কুল-কলেজ না থাকাসহ নানা কারণেই আবাসিক বাসাগুলোতে থাকতে চান না তারা।

Advertisement

আগে বাসাগুলোতে অবস্থানের জন্য নির্ধারিত ভাড়া ভাতা থেকে কাটা হতো। ভাতার অবশিষ্ট টাকা মূল বেতনের সঙ্গে যোগ হতো। তাই তখন নিম্নমানের হলেও নিজেদের সঙ্গে মানিয়ে নিতেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। কিন্তু ৩০ অক্টোবর ২৫৫তম সিন্ডিকেটে বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী নতুন নিয়ম প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। নিয়মানুযায়ী আবাসিকে অবস্থান না করলে ভাতার পুরো টাকাই মূল বেতনে যোগ হবে। আর অবস্থান করলে তার পুরোটাই কেটে রাখা হবে। যা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ।

এ বিপুল পরিমাণ ভাড়ায় মানহীন বাসায় থাকতে আগ্রহী নন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তাই আগে হাতেগোনা কয়েকজন বাসা বাতিলের আবেদন করলেও নতুন নিয়মের পরপরই গণহারে বাসা ছাড়তে থাকেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। জানুয়ারি মাসেই বাসা বাতিল করেছিলেন ৫৮ জন।

আরও পড়ুন: মাসিক ২০০ ও ১৫০ টাকা হারে বৃত্তি পাবেন ৫০০ শিক্ষার্থী

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পুরনো ভবনের বাসাগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা। সবমিলিয়ে বাসাগুলো খুবই নিম্নমানের। পানি আর বিদ্যুৎ ছাড়া তেমন কোনো সুবিধাই নেই। এত বেশি পরিমাণ ভাড়া দিয়ে এখানে না থাকার চেয়ে শহরে অথবা ক্যাম্পাসের আশপাশে এর চেয়ে কম দামে আরও ভালো বাসা পাওয়া যায়। সেখানে থাকা অনেক ভালো। এজন্য আমি বাসা ছেড়ে দিয়েছি।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘৫০০ বর্গফুটের একটি বাসা, যেখানে একটি টেবিল রাখলে হাঁটার জায়গা থাকে না। সেখানে থাকলে একজনের বেতনের যে ৫০ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে, একই পদমর্যাদার এবং একই বেতন স্কেলের আরেকজন ১০০০ বর্গফুটের বাসায় থাকলেও তার থেকে একই পরিমাণ ভাড়া কাটা হচ্ছে। যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পরে আবার এখানে বাসা বরাদ্দের জন্য আবেদন করবো। কিন্তু নতুন করে নিয়ম হওয়ার পর আমি আর বাসা বরাদ্দের জন্য আবেদন করিনি। এর থেকে বাইরে থাকলেই লাভ।’

আরও পড়ুন: সহকারী জজ হলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থী

এদিকে আবাসিক ভবনগুলো ফাঁকা থাকায় নষ্ট হচ্ছে ভবনগুলোর অবকাঠামো। ধসে পড়ছে জানালার কাচ ও দেওয়ালের সিমেন্টের প্রলেপ, নষ্ট হচ্ছে দেওয়ালের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব। এছাড়া আবাসিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ক্যাম্পাস ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। যে কিছুসংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এসব ভবনে বাস করেন তারাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আদায় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।

আবাসিক ভবনে থাকছেন আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষকরা, বিশেষ করে সিনিয়র শিক্ষকরা আবাসিক এলাকা থেকে বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ ফুল হাউজ রেন্ট কর্তনে সরকারের যে বিধিমালা, সে অনুযায়ী বাসা ভাড়া কর্তন করলে দেখা যাচ্ছে অনেক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হতে হচ্ছে। বাসাগুলোর অবস্থাও সেরকম না। অপরদিকে যে সসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা সেগুলোও এখানে নিশ্চিত করা নেই। পাশাপাশি নিজেদের ছেলেময়েদের পড়ালেখা ও তাদের মান উন্নয়নের বিষয়টাও জড়িত আছে। ফলে পূর্ণ হাউজ রেন্ট কর্তনের নিয়মের পরপরই অধিকাংশ শিক্ষক এখান থেকে চলে গেছেন এবং চলে যাচ্ছেন। এতে আবাসিক এলাকার ভবনগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।

এ শিক্ষক আরও বলেন, মেরামতের অভাবে ভবনগুলোর অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি সিনিয়র শিক্ষকদের অবস্থান না করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্নমুখী সমস্যা ভবিষ্যতে দেখা দিতে পারে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি বিকল্প কোনো প্রস্তাব দিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বললে আমার মনে হয় সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে। আমি আহ্বান করবো কর্তৃপক্ষ সুন্দর একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। যে সসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করবে। আর সমস্যা সমাধান হলে আবাসিক এলাকার সেই পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে মনে করি।

এস্টেট অফিসের প্রধান ও বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব সামছুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এর কারণে সরকারের সম্পদের ক্ষতি সাধন হচ্ছে ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা মনে করি সরকারকে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সম্পদ রক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও বাসাগুলো সুরক্ষার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাই।

এসজে/জেআইএম