মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নরসিংদী পৌরসভার বাসিন্দারা। দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। এরপরও মশকনিধন কার্যক্রমে ধীরগতি বাড়ানো হচ্ছে না। তিন লাখ জনসংখ্যার প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনায় জনবল কেবল আটজন। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
Advertisement
পৌরবাসী বলছেন, মশকনিধনে ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম আরও বাড়ানো দরকার। অন্যথায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। তবে পৌরমেয়র বলছেন, মশকনিধনে পৌরসভার পাশাপাশি নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে ১০.৩২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয় নরসিংদী পৌরসভা। এখানে প্রায় এক লাখ ভোটারের বিপরীতে বসবাস করেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। ৩৩টি মহল্লার অধিকাংশই শিল্পাঞ্চল ছাড়াও পৌর অঞ্চলটি নানা কারণেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিক সুবিধার অন্যতম জনগণের স্বাস্থ্য বিবেচনায় মশকনিধন কার্যক্রম জরুরি হলেও ধীরগতি ভাবিয়ে তুলেছে পৌর অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষদের।
আরও পড়ুন: মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও মানুষের মৃত্যু বেদনাদায়ক
Advertisement
বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিটানো হচ্ছে মশকনিধন ওষুধ। এতে বাড়ছে মশার উৎপাত। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন-যাপন। অনেকেই এডিস মশার আক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুজ্বরে। বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকিও।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ২০০ মানুষের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে নরসিংদী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১২৫ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭ জুলাই পুষ্প রানি সাহা (৭১) নামে এক বৃদ্ধা ও ২৫ সেপ্টেম্বর জিহাদ (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু শনাক্ত তিন হাজার ২০০ হলেও প্রকৃত হিসাবে কয়েকগুণ বেশি। কারণ অসংখ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পৌর এলাকার বাসিন্দা সুমন সাহা বলেন, চারপাশে যে হারে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে, তা দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশপাশে একাধিক বাসায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আছে। কিন্তু মশকনিধন কার্যক্রম খুব একটা চোখে পড়ে না। মেয়রের কাছে দাবি মশকনিধন কার্যক্রম আরও বাড়ানো হোক।
Advertisement
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যুর কারণ হাসপাতালে দেরিতে আসা
কলেজশিক্ষার্থী প্রিন্স বলেন, ঘরের ভেতর মশারি টানাই। কয়েল জ্বালাই। এরপরও মশা কামড়ায়। এককথায় মশার জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে মশকনিধন কার্যক্রম আরও বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রলয় জামান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে মশার সমস্যা একটি বড় সমস্যা। দিনে রাতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। এর ওপর ডেঙ্গুর যে প্রভাব দেখা দিয়েছে, তা আমাদের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।
তিনি আরও বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে নানাবিধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত না। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে নিজেদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
নরসিংদী পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদিনই মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলমান। এ মুহূর্তে যেহেতু মশার উপদ্রব বেশি, এ জন্য আমরা রুটিনের বাইরেও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এটা আসলে একদিনের কার্যক্রম নয়। এটি নিয়মিত চালাতে হবে। ইচ্ছা করলেই একদিনে বেশি ওষুধ দেওয়া যাবে না। মশকনিধন কার্যক্রম সফল করতে পৌরসভার পাশাপাশি নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে মশার লার্ভার জন্ম হতে না পারে খেয়াল রাখতে হবে। এ মুহূর্তে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এসজে/জেআইএম