খেলাধুলা

শুধুই কাকতালীয়, নাকি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র?

ঘটনা একবাংলাদেশে আয়োজিত এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা ছিল ৬ মার্চ; কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আইসিসির সূচিতে বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে হংকং-এর বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রস্তুতিমূলক ম্যাচটি রাখা হয় ৫ মার্চ। তাই টুর্নামেন্টের একমাত্র দল হিসেবে কোনো প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ না খেলেই সরাসরি বাছাই পর্বে খেলতে হয় বাংলাদেশকে। ৬ মার্চ বাংলাদেশে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে দুই দিন বিরতি দিয়েই আবার ভারতে বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে যোগ দেয় বাংলাদেশ। ৬ তারিখে এশিয়া কাপের ফাইনাল থাকার পরও কিভাবে এমন সূচি নির্মিত হলো সেটা নিশ্চয়ই একটা বড় প্রশ্ন!ঘটনা দুইবাছাই পর্বের বাংলাদেশের সবগুলো ম্যাচ ছিল ধর্মশালায়, যেখানে প্রতিদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল ব্যাপক। ছিল না কোনো রিজার্ভ ডে, তাই এমন পরিস্থিতিতে একাধিক ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলে বিপদেই পড়তে হতো বাংলাদেশকে। যদিও বৃষ্টির কারণে আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ড টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়ার পর সেটি নিয়ে সমালোচনা হয়, কিন্তু তার আগেই কেন এ বিষয়টি নিয়ে ভাবা হলো না সেটা অত্যন্ত আশ্চর্যের! ভারত দেশ হিসেবে বেশ বড়। সেক্ষেত্রে যেখানে প্রস্তুতি ম্যাচগুলো আয়োজিত হয়েছিল বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকা মাঠগুলোতে, সেখানে বাছাই পর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো কিভাবে বৃষ্টি বহুল জায়গায় রাখা হলো তা বিস্ময়কর!ঘটনা তিনবাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেই দুই আম্পায়ার সুন্দারাম রবি (এস রবি) ও রড টাকার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। যদিও কোন ডেলিভারিগুলিতে তাদের সন্দেহ তা তারা স্পষ্ট করেননি। দুই আম্পায়রই ছিলেন এশিয়া কাপে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু তখন কেন তারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন না?অতঃপর টুর্নামেন্টের মধ্যেই অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে হলো তাদের। খবর রয়েছে, তাসকিনকে নাকি ৩ মিনিটে ৯টি বাউন্সার করতে বলা হয়েছিল। এরপর বিস্ময়করভাবে, তাসকিন ও সানিকে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই আপাত নিষিদ্ধ করা হলো। পরিবর্তিত খেলোয়াড় নেয়ার সময়ও তখন তেমন ছিল না। এমন একটা টুর্নামেন্টের মাঝে বাংলাদেশের মনোবল এভাবে ভেঙে দেয়াটা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা সেটা অবশ্যই আলোচনার বিষয়!ঘটনা চারভারতের বিপক্ষে যে ম্যাচটি মাত্র এক রানে হেরে গেল বাংলাদেশ, সেখানে ‘স্লো ওভার রেট’-এর কারণে অধিনায়ক মাশরাফিকে ম্যাচ ফি’র শতকরা ২০ ভাগ ও বাংলাদেশ দলের সব খেলোয়ারকে শতকরা ১০ ভাগ জরিমানা করা হলো। এই ম্যাচেও আম্পায়ারিং এর দায়িত্বে ছিলেন সেই দুই বিতর্কিত আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ড। বাংলাদেশের নির্ধারিত ২০ ওভার করতে সময় লেগেছিল ১০৪ মিনিট, অপরদিকে ভারতের লেগেছিল ১১০ মিনিট। যেখানে ১ ওভার করতে ৪ মিনিট লাগার কথা, সেখানে শেষ ৩ বল করতেই ভারত সময় নিয়েছিল ৭ মিনিট। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের চেয়েও ৬ মিনিট বেশি সময় নিলেও ভারতকে কেন জরিমানা করা হলো না? কেনই বা এত ঘটনার পর সেই দুই বিতর্কিত আম্পায়ারকেই আবার ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচেরই দায়িত্ব দেয়া হলো? শুধু তাই নয়, এই দুই আম্পায়ার দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও।ঘটনা পাঁচনিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের নিজেদের শেষ ম্যাচে ৯ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ২ উইকেটে ৫৭। দশম ওভারে সাকিবের প্রথম বলেই একটি পরিষ্কার এলবিডব্লিউ দিলেন না আম্পায়ার। যার আউটটি দিলেন না সেই মুনরো পরবর্তিতে ৩৩ বলে ৩৫ রানের সময়োপযোগী একটি ইনিংস খেললেন, অথচ সে সময় মুনরো আউট হয়ে গেলে নিউজিল্যান্ডের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারতো। এমন একটি পরিষ্কার আউট আম্পায়ার কিভাবে দিলেন না সেটা নিশ্চয়ই তদন্তের দাবি রাখে! অথচ নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ের সময় গ্র্যান্ড ইলিয়টের বলে মাশরাফিকে এলবি দিলেন আম্পাররা। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেলো, বলটি পিচ করেছে অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে। কিন্তু সুইং করে সেটি বেরিয়ে যাচ্ছে লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে। এমন একটি বলে কিভাবে মাশরাফিকে আউট দিলেন আম্পায়াররা?উপরের পাঁচটি ঘটনার সবগুলোই বাংলাদেশের সঙ্গে ঘটেছে এবং বিশ্বকাপের মতো একটি টুর্নামেন্টেই ঘটেছে। এই ঘটনাগুলি কি নিছকই ঘটনা না পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? সেটা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক করার সুযোগ আছে। তবে একটা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দলের সঙ্গেই আইসিসির এমন আচরণকে আদৌ ‘কাকতালীয়’ বলে আর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে কি?লেখক: কম্পিউটার প্রকৌশলীআইএইচএস/বিএ

Advertisement