দেশজুড়ে

রেলপথের স্লিপার না কিনেই দেড়কোটি টাকা আত্মসাৎ

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথ নির্মাণে স্লিপার না কিনেই দেড়কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য উঠে এসেছে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রতিবেদনে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের বিরুদ্ধে তিন হাজার ৩০০টি ব্রডগেজ লাইনের স্লিপার না লাগিয়ে এ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয়। এ প্রকল্পের অধীনে মাঝগ্রাম স্টেশনের আগেই তিন হাজার ৩০০টি ব্রডগেজ লাইনে স্লিপার বসানোর কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে সেখানে ব্রডগেজের পরিবর্তে বসানো হয় ডুয়েলগেজ লাইন। পরে ব্রডগেজের নামে কেনা স্লিপারগুলোই ডুয়েলগেজে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নতুন করে স্লিপার না কেনা হলেও এক কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

এ বিষয়ে অডিট বিভাগকে একেক সময় একেক তথ্য দিয়েছে রেলওয়ের অর্থ ও হিসাব এবং প্রকৌশল বিভাগ। তারা কখনো বলেছেন লাইন সংস্কারের জন্য এগুলো ঈশ্বরদীতে রাখা আছে। আবার কখনো বলা হয়েছে সারদাতে রাখা আছে এগুলো। তবে অডিট প্রতিষ্ঠান কোথাও স্লিপারের তথ্য পায়নি।

সরেজমিন মাঝগ্রাম স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, মাঝগ্রাম স্টেশনের কোথাও স্লিপার মজুত নেই। এমনকি কোথাও পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। একই চিত্র সারদা স্টেশনেও। তবে মাঝগ্রামে যে ডুয়েলগেজ লাইন বসানো হয়েছে সেখানে স্লিপার বসানো হয়েছে। কিন্তু ব্রডগেজ লাইনের জন্য যে স্লিপার রেলওয়ে কিনেছে তার কোনো খোঁজ নেই।

Advertisement

পাকশি রেলওয়ে বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক ও পশ্চিম রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, ‘অডিট প্রতিষ্ঠান শুধু একটি লাইনের স্লিপারের ক্যালকুলেশন করেছে। আরেকটি লাইনেরটা তারা করেননি। সেই হিসেবের তারা আপত্তি দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সেটির জবাব দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত এটি নিষ্পত্তিও দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্লিপার অনেক বড়সর জিনিস। একেকটির ওজন ৩০০ কেজির ওপরে। মিস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি হয়তো অডিট ভুল করেছে।’

অনিয়মের বিষয়ে জানতে প্রধান হিসাব অফিসার গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথের সঙ্গে একাধিকবার তার দপ্তরে ও মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Advertisement

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এতোবড় অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। যদি হয়ে থাকে সেটি হবে অপ্রত্যাশিত-অনাকাঙ্ক্ষিত। অডিট আপত্তির বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

এ বিষয়ে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সমন্বয়কারী জায়েদুর রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে খুদেবার্তা পঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/জিকেএস