গাজা উপত্যকার বিভিন্ন হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে মর্গে পরিণত হতে পারে এসব হাসপাতাল। এমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি)। বুধবার (১১ অক্টোবর) জ্বালানি সংকটের কারণে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
Advertisement
সেখানকার হাসপাতালসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এখন জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেটাও স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ এভাবে হয়তো চালানো যাবে আর অল্প কিছু সময়। এরপর কী হবে সেটা জানে না গাজার সাধারণ মানুষ। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে বাসিন্দারা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার চূড়ান্ত সতর্কবার্তা পান। এর এক ঘণ্টা পরেই অন্ধকার হয়ে যায় সবকিছু।
আরও পড়ুন: গাজা যেন এক উন্মুক্ত কারাগার
আগেই থেকেই গাজায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট একটি নিত্যদিনের ঘটনা। জাতিসংঘের মানবিক সংগঠন ওসিএইচএ’র তথ্য অনুসারে, গাজার বেশিরভাগ বাড়িতে দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো। গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পায় ইসরায়েল থেকে। পাশাপাশি গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মিশর থেকে অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত শনিবার (৭ অক্টোবর) ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রকেট হামলার পর গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
Advertisement
মধ্যপ্রাচ্য এবং এর নিকটবর্তী অঞ্চলে রেড ক্রসের আঞ্চলিক পরিচালক ফ্যাব্রিজিও কার্বোনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট বাড়তে থাকায় মানবিক দুর্দশা চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে। বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য সব পক্ষকে আন্তরিক অনুরোধ করছি।
গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালগুলোতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। নবজাতক শিশু এবং বয়স্ক রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে কিডনি ডায়ালাইসিস এবং এক্সরে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তিনি হামাস যাদের জিম্মি করে নিয়ে গেছে তাদের বিষয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি এসব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধ এবং একই সঙ্গে তীব্র বোমাবর্ষণের কারণে হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজার বেশিরভাগ বাসিন্দাই পানির ঘাটতিতেও ভুগছে এবং একটি অনিশ্চিত জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বসবাস করছে। ইসরায়েল ও মিশরের অবরোধ, স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ কমে যাওয়াসহ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতিকে ভঙ্গুর করে তুলেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েলে পা রেখেছেন ব্লিঙ্কেন
জাতিসংঘ সেখানকার ২২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনায় সাহায্য করছে। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ববর্তী সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে হামাসের সর্বশেষ হামলার পর গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন এবং অবকাঠামো পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গাজার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপে হিমসিম অবস্থা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় আরও বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে।
টিটিএন