আইন-আদালত

কুমিল্লার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এক মাসের কারাদণ্ড

হাইকোর্টে স্থগিত থাকার পরও বিচারিক আদালতে চার্জ গঠন করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে আদালত অবমাননার দায়ে কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (বিচারক) সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাকে ঢাকার সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। তিনি ওই ঘটনার পর পরই বদলি হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।

একই সঙ্গে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। জরিমানার এ অর্থ সুপ্রিম কোর্টে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এক মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করেছিলেন সোহেল রানা। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে সোহেল রানার প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ এ আদেশ দিলেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি মাসুদ হাসান দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়।

আবেদনকারী আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায় বলেন, সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা গ্রহণ না করে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোহেল রানা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে সংযুক্ত আছেন বলে জানান আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়।

Advertisement

আইনজীবীদের তথ্যমতে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়।

মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা চলতি বছরের ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনকালে আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত।

এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোহেল রানাকে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন।

গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ২১ আগস্ট তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন।

তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন।

হাইকোর্টের ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আরজি জানান। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন।

আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে তার ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে হাইকোর্ট আজ এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

এফএইচ/এমএইচআর/এএসএম