আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে রাশিয়ার লাভ, দুশ্চিন্তায় ইউক্রেন

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ থেকে লাভবান হওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে রাশিয়ার। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিতে হচ্ছে পশ্চিমাদের। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নজর ইউক্রেন থেকে ইসরায়েলের দিকে ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেটি হলে আখেরে লাভ হবে রাশিয়ারই। তাছাড়া, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তাতে আরও ফুলেফেঁপে উঠবে মস্কোর অর্থভাণ্ডার।

Advertisement

বিষয়টি স্বীকার করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল সংঘাতে নজর দেওয়ায় যদি ইউক্রেনের কাছে অস্ত্র সরবরাহের গতি কমে যায়, তাহলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য অর্জন দ্রুততর হবে।

আরও পড়ুন>> হামাসের সঙ্গে রাশিয়ার তুলনা করলেন জেলেনস্কি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেল-আবিবের কাছে বর্তমানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মজুত রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চেয়েছে মূলত আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র, গাইডেড যুদ্ধাস্ত্র এবং গোলাবারুদ। তবে গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান শুরু করলে অস্ত্র ভাণ্ডারে চাপ পড়বে ইসরায়েলের।

Advertisement

সাবেক ইউএস মেরিন কর্নেল ও বর্তমানে স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ সেন্টারের উপদেষ্টা মার্ক ক্যানসিয়ান বলেন, সেই সময় ইসরায়েল ব্যাপকভাবে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার শুরু করবে। যদিও তাদের কাছে অস্ত্রের বড় মজুত রয়েছে, তবে তা দীর্ঘ অভিযানের জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলের সমর্থনে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ক্যানসিয়ানের মতে, শহুরে অঞ্চলে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল গাইডেড যুদ্ধাস্ত্রের দিকে ঝুঁকবে। তবে ইউক্রেনেরও আরও অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োজন, কারণ তারা এখন রুশ সামরিক ঘাঁটির মতো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে চায়।

‘কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো উৎপাদন করতে পারবো না। তাই যুক্তরাষ্ট্রকে বিদ্যমান মজুত থেকেই অস্ত্রগুলো বের করতে হতে পারে। আর তার ফলে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ না হলেও অন্তত গতি কমে যেতে পারে।’

Advertisement

পুতিনের পোয়াবারোলন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের প্রধান নির্বাহী ব্রনওয়েন ম্যাডক্স ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে যদি ইসরায়েল ও ইউক্রেনের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা ইসরায়েলকেই নেবে। যদিও এই মুহূর্তেই যুক্তরাষ্ট্রকে এমন কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে না। তবু বুঝতে পারি, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চিন্তিত হতেই পারেন এবং তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলের জন্য মন কাঁদছে জেলেনস্কির

কিছুদিন আগেই সরকারি শাটডাউন এড়াতে সাময়িকভাবে ইউক্রেনের জন্য নতুন সহায়তা পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। ভবিষ্যতে কিয়েভকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি এখন আরও বেশি নড়বড়ে হতে পারে।

গত ৫ অক্টোবর রাশিয়ার সোচি শহরে এক অনুষ্ঠানে পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাহায্যই ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে টিকিয়ে রেখেছে। যদি অস্ত্র দেওয়া আগামীকাল থেকে বন্ধ হয়, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই কিয়েভের সব গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলের জন্য ‘দরদ’ দেখায়নি চীন, হতাশ যুক্তরাষ্ট্র

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপের সমর্থনও দিনদিন নড়বড়ে হয়ে উঠছে। সম্প্রতি শস্যচুক্তি নিয়ে বিরোধের জেরে ইউক্রেনকে নতুন করে আর কোনো সহায়তা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে পোল্যান্ড। আপত্তি ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে স্লোভাকিয়া থেকেও। কারণ, দেশটিতে ক্ষমতায় ফিরতে চলা নেতা রবার্ট ফিকো বরাবরই রুশপন্থি হিসেবে পরিচিত।

তেলের দাম বাড়লেও রাশিয়ার লাভইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। এর ফলে রাশিয়ার রপ্তানি আয় আরও ফুলেফেঁপে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের প্রভাব তেলের বাজারে, বাড়লো দাম

র‌্যান্ড করপোরেশনের নীতি গবেষক অ্যান মেরি ডেইলি বলেন, তেলের দাম বাড়লে এটি তাদের (রাশিয়া) অস্ত্র উৎপাদনে ব্যয় অব্যাহত রাখার সুযোগ দেয় এবং বাজেট ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। অর্থাৎ, রাশিয়া এটি থেকে নিশ্চিতভাবেই অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ, এনডিটিভিকেএএ/