নির্বাচনকালে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। একই সঙ্গে সেসব এলাকায় পুলিশ, আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবির নিয়মিত টহলদানের ব্যবস্থা করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
Advertisement
বুধবার (১১ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাক্ষাতে সংগঠনটির নেতারা এসব দাবি জানিয়েছেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বৈঠকের পর জানান, তারা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে নয় দফা বাস্তবায়নের জন্য বলেছেন কমিশনকে। কমিশনও সাম্প্রদায়িক সংঘাত রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তাদের আশ্বাস দিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অর্থে সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ আজ পরাশক্তিসমূহের কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হওয়ায় আমরা দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। আমরাও আপনার মতো আশা করতে চাই, উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জোট আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তুলবে।
Advertisement
আরও পড়ুন: নির্বাচনী সংঘাতে এখন মামলা হয় কিন্তু বিচার হয় না: রানা দাশগুপ্ত
তিনি বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও অতীতে এ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত আড়াই কোটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য তা মোটেই সুখকর ছিল না। একদিকে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে তাদের যথাযথ অংশীদারত্ব-প্রতিনিধিত্ব থাকে না, অন্যদিকে নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। নির্বাচনে ব্যক্তিস্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে ও রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করে অসুস্থ কদর্থকর রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরি করা হয়। সংখ্যালঘু হিসেবে টার্গেট করে তাদের উপর নির্বিচারে নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়। ঘর-বাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলা চালানো হয়। জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
>> ভারতের নির্বাচন কমিশনের অনুরূপ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগিদে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে যথাযথ সুপারিশমালা প্রেরণ করা হোক।
Advertisement
>> নির্বাচনী ব্যালটে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা করা হোক, যাতে সংসদকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের নিমিত্তে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সতর্ক ভূমিকা পালন করে।
>> ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম বাধার সম্মুখীন না হতে হয় এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণে সমান সুযোগ পায় তার জন্য নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।
>> নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক। যদি কোনো প্রার্থী বা কোনো দল নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে তবে তার শাস্তির বিধান করা হোক।
>> নির্বাচনের পূর্বাপর সময়কালে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও জননিরাপত্তা, আইন-শৃংখলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তাগিদে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ, আনসার ইত্যাদি মোতায়েনের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবির নিয়মিত টহলদানের ব্যবস্থা করা হোক এবং গঠন করা হোক ‘মনিটরিং সেল’।
>> নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংখ্যালঘু নিরাপত্তায় গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচনের প্রার্থীসহ প্রার্থীর সমর্থক সবাইকে সম্যকভাবে অবহিতকরণ এবং রেডিও, টেলিভিশনে তা প্রচার ব্যবস্থা করা।
>> সব ধর্মীয় উপাসনালয় যথা- মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গীর্জা নির্বাচনী প্রচার কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক।
>> ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বিবৃতি বা এ ধরনের যাবতীয় প্রচারণা বিশেষ ক্ষমতা আইনের 2 (1) (iv) 2 (1) (vii) ধারায় ক্ষতিকর কার্য হিসেবে অপরাধ গণ্যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে দায়ী ব্যক্তিদের প্রার্থিতা বাতিলের ব্যবস্থা করা হোক।
>> নারী সমাজের মতোই দেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দলের কাঠামোতে অন্যূন ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সংযোজিত করা হোক। যুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্যে ১০০টি আসন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
এমওএস/এমএইচআর/জিকেএস