বর্ষা মৌসুম বিদায় নিয়েছে। চলছে শরৎকাল। তবে আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায়ও আবহাওয়ার আচরণ ছিল ভিন্ন। ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে চুয়াডাঙ্গার মানুষকে। তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জনজীবন। শরতের আশ্বিনে এসে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে এ জেলায়। তবে কমেনি তাপমাত্রা। ৩১-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। আর তা বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অনুভূত হচ্ছে ‘তীব্র গরম’।
Advertisement
গড় হিসেবে প্রতিবছরই এ জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। বর্ষার ভরা মৌসুমেও আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না থাকায় তাপপ্রবাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। এখন গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কিছুটা শীত অনুভূত হলেও দিনের আবহাওয়া সেই আগের মতো গরম।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে ঋতু পরিক্রমায় এ পরিবর্তন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গ্রামের মতো শহরাঞ্চলেও রোদের তাপ ও গরমে এখন বেশ নাকাল মানুষ। একটানা ভারী বৃষ্টি হলেই তবে গরম কমার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
Advertisement
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত চার বছরে জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ জেলার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমছে। ২০২০ সালের ওই চারমাসে মোট বৃষ্টিপাত ছিল ১১৮০ মিলিমিটার। যারমধ্যে ২০২০ সালের জুনে ২৯৫, জুলাইয়ে ৪৮৯, আগস্ট ১৬২ ও সেপ্টেম্বরে ২৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। এরপর ২০২১ সালে এ চারমাসে ১২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ছিল। যারমধ্যে ২০২১ সালে জুনে ২৭৫, জুলাইয়ে ৩২২, আগস্ট ৫১৬ ও সেপ্টেম্বরে ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। ২০২০ ও ২০২১ সালে বৃষ্টিপাতে পরিমাণে সামান্য তারতম্য দেখা গেলেও মূলত ২০২২ সাল থেকে এ জেলায় বৃষ্টিপাত কমে গত দুই বছরের তুলনায় অর্ধেকে নামে।
যেমন ২০২২ সালে এ জেলায় মাত্র ৮৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। যারমধ্যে জুনে ১০৪, জুলাইয়ে ১৬৬, আগস্ট ১৭৬ ও সেপ্টেম্বরে শুধু ৪১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় গড় বৃষ্টিপাত কমেছে। এছাড়া ২০২৩ সাল অর্থাৎ চলতি বছরের ভরা বর্ষায় ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বৃষ্টিপাত বাড়লেও সেটা আশানুরূপ না। ২০২৩ সালের জুনে ১৫৬, জুলাইয়ে ১২৪, আগস্ট ২১০ ও সেপ্টেম্বরে ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডে হয়েছে। অর্থাৎ চারমাসে ৬৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। যেটা পরিবেশের জন্য পর্যাপ্ত না। আর গত বর্ষা মৌসুমের তুলনায় এ বর্ষা মৌসুমে প্রায় অর্ধেকই বলা চলে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের চেয়ে তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমই বেশি ছিল। আর প্রতিবছরই বলতে গেলে ভরা বর্ষায় এ জেলার গড় বৃষ্টিপাত কমছে। তবে এ বছর চলতি আশ্বিন মাসে মোটামুটি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি আরও বলেন, মৌসুমি বায়ুর নিষ্ক্রিয়তার কারণে ভরা বর্ষায় তাপপ্রবাহ চলছে। এখন মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বাড়ায় বৃষ্টিপাতও বেড়েছে। তবে সেটা অন্য বছরের তুলনায় কম।
Advertisement
এসজে/এএসএম