আইন-আদালত

কঠিন শর্তে যোগ্যতা অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালকের লাইসেন্স কেন নয়

১৬৫ সিসির ওপরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতির আগে দেশে চালকের যোগ্যতার প্রতি কঠোর শর্ত আরোপ করে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ তাজরুল হোসেন।

জনস্বার্থ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ তাজরুল হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান।

Advertisement

‘মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার দেশে’ শিরোনামে গত বছরের ১৭ জুন জাতীয় একটি দৈনিকে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ তাজরুল হোসেন গত রোববার (১ অক্টোবর) রিটটি করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারির এ আদেশ দেন আদালত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে শেরপুর জেলা শহর থেকে সদর উপজেলার হালগড়া চকবড়ইগাছিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন বিজিবির সদস্য মো. ইউসুফ জামিল (২৬)। পথে আমতলী সেতুর ওপর পৌঁছালে তিনি মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা বলছে, প্রতিবছর দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৮ দশমিক ৪ জন। তাদের প্রায় ৪০ শতাংশেরই বয়স ২৪ থেকে ৩০ বছর। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। যদিও মাথাপিছু মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান সবার পেছনে।

তিনি বলেন, সড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার মধ্যে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি। আমাদের এখানে যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়, যত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিসির মোটরসাইকেলই হোক সেটা দিয়ে চালানো যায়। কিন্তু সারা দুনিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রে দেখা গেছে যে, মোটরসাইকেলের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্যাটাগরি ডিফারেন্ট। সেই ক্ষেত্রে ডিফারেন্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়ে ভিন্ন ট্রেনিং নিতে হয়। তার পরে গিয়ে হাইসিসির মোটরসাইকেল চালাতে পারে। আমাদের দেশে এমনিতেই দুর্ঘটনা বেশি, তার পরে যদি হাই ক্যাপাসিটির মোটরসাইকেল রাস্তায় আসে তা হলে তো পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। সে জন্য আমরা বন্ধ করতে না, চাচ্ছি প্রপার ট্রেনিং নিয়ে লাসেন্স নেওয়ার। সারা দুনিয়াতে আছে আমাদের এখানেও থাকুক।

আইনজীবী সৈয়দ তাজরুল হোসেন বলেন, দেশে ৩৭৫ সিসির মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারাদেশে দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বলে পত্রিকায় এসেছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হার সর্বোচ্চ। যে কারণে ১৬৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়ার আগে দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহত্তর স্বার্থে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন জরুরি। যে কারণে জনস্বার্থে রিট করা হলে আদালত ওই রুল দিয়েছেন।

Advertisement

এফএইচ/এসএনআর/এএসএম