ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়তে এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় সরকার। শ্রেণিকক্ষে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোই ছিল এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৪৬ হাজার ৩৪০টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করার কথা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি)। মেয়াদকাল শেষ হলেও শেষ হয়নি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের কাজ।
Advertisement
আবার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম না থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগের জন্য কেনা হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি মডেম। যাতে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। মডেম কেনার নামে প্রকল্পের এ অর্থ সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে উঠে এসেছে অডিটে।
‘নিরীক্ষায় যা উঠে এসেছে তার কারণ, প্রভাব ও সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেটি আমরা গত ২০ আগস্ট মাউশিতে পাঠিয়েছি। এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ হাতে পেয়েছে কবে, তা জানি না। আমাদের অনুরোধ ছিল- প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর যে নিরীক্ষা আপত্তিগুলো রয়েছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে যাতে সেগুলোর জবাব দেওয়া হয়।- শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের পরিচালক আমীমুল এহসান কবীর’
শুধু মডেম কেনার ক্ষেত্রেই নয়, অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে আরও সাতটি খাতে। এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ ভেন্যুর ভাড়া, ভ্রমণ ভাতা, পরিবহন ভাড়া, ইন্টারনেট বিল, সম্মানি, সনদ মুদ্রণ ও ডুপ্লিকেট ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ১৭ কোটি টাকা নয়-ছয়ের প্রাথমিক সত্যতাও মিলেছে। বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র।
Advertisement
আরও পড়ুন>>স্কুল-কলেজে যৌন হয়রানি, প্রাইভেট-কোচিংয়েই ‘সর্বনাশ’
গত ২০ আগস্ট প্রতিবেদনটি মাউশিতে পাঠায় শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। এতে অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়া টাকা আদায়ের পাশাপাশি দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
প্রকল্প ও অডিট প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগবে শিক্ষায়ও। শ্রেণিকক্ষে থাকবে ল্যাপটপ ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট। প্রজেক্টরে ই-পাঠ্যবই দেখবে শিক্ষার্থীরা। ডিজিটাল স্পিকারে কথা বলবেন শিক্ষক। সামনে-পেছনে বসা সব শিক্ষার্থী স্পষ্ট শুনতে পাবে শিক্ষকের লেকচার। প্রযুক্তির ব্যবহারে পাঠদানের আদর্শ এমন পরিবেশ থাকা শ্রেণিকক্ষকে বলা হবে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’।
প্রথম পর্যায়ে প্রস্তুত করা একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম/সংগৃহীত
Advertisement
ডিজিটাল বা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একটি প্রকল্প হাতে নেয় মাউশি। এর নাম দেওয়া হয় ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (দ্বিতীয় পর্যায়)’। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে একবছর মেয়াদ বাড়ানো হয়।
২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থাৎ চার বছরে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পে ৫৬১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ১১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার টাকা, যা ছাড় করা অর্থের ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রাক্কলিত ব্যয়ের মাত্র ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রকল্প শুরুর পর চার বছরে অগ্রগতি মাত্র ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। নতুন করে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন>>গুচ্ছ ভর্তিতে ‘এক গুচ্ছ’ সংকট
এদিকে, প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষে নির্দেশনা মেনে অডিট শুরু করে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে এ অডিট পরিচালিত হয়। সেগুলো হলো- ইকোনমিক্যাল (মিতব্যয়িতা), ইফিসিয়েন্সি (ফলপ্রসূ), ইফেকটিভনেস (কার্যকারিতা)। অডিট শেষে অধিদপ্তর প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারের আর্থিক ক্ষতিসহ উঠে এসেছে ১২টি ফাইন্ডিংস।
‘খুব বেশি দিন হয়নি। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। আপত্তিগুলোর কোথায়, কার সংশ্লিষ্টতা তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। নিয়ম মেনে এগুলোর জবাব দেওয়া হবে।-মাউশির যুগ্ম-সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস’
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই, সাড়ে ৩ কোটি টাকার মডেম কেনা শেষ!
প্রকল্পের আওতায় ৪৬ হাজার ৩৪০টি মাল্টিমিডিয়া ও দুই হাজার ১২০ স্মার্ট ক্লাসরুম স্থাপনে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৬০টি উপকরণ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। যার মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ক্লাসরুমে একটি করে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেট মডেম ও স্পিকার। প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন শেষ হয়নি। অথচ ১৩ হাজার ৫৭৪টি মডেম কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। সেসব মডেম কোথায় ব্যবহার হচ্ছে বা হয়েছে, তা জানা না গেলেও কেনাকাটা বাবদ তিন কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে টাকাও। অডিট প্রতিবেদনে এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক বলে সুপারিশ করা হয়।
প্রতিটি কক্ষই ভেন্যু, ৯ কোটি টাকা তুলে ‘আত্মসাৎ’
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। লক্ষ্য ছিল পাঁচ লাখ ৭২ হাজর ৮৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার। অথচ চার বছরে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন মাত্র এক লাখ ৪৭ হাজার ৯১৩ শিক্ষক। ১২টি কেন্দ্রে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রকল্পে একটি ভেন্যু বাবদ বরাদ্দ ছিল দুই হাজার টাকা। কথা ছিল একটি প্রতিষ্ঠানকে একটি ভেন্যু হিসেবে ধরা হবে। অথচ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কক্ষকে আলাদা আলাদা ভেন্যু দেখিয়ে মোট ৯ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার ৫শ টাকা তুলে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ভেন্যু বাবদ ভাড়ার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো জমা দেওয়া হয়নি।
সংযোগ না থাকলেও ইন্টারনেট বিল ১৯ লাখ টাকা!প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগই ছিল না। মাঝে-মধ্যে মডেম ব্যবহার করে কাজ সেরে নেওয়া হয়। অথচ ইন্টারনেট বিল বাবদ ১৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অডিট টিম প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পেয়েছে ভিন্নচিত্র, যা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক জানিয়েছেন, ভেন্যুতে ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। অথচ বিল পরিশোধ করার নামে সরকারের ১৯ লাখ ৪১ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।
ভুয়া সই-ভ্রমণ ভাতা ‘তছরুপ’ ৩ কোটি টাকাএক কর্মকর্তার নামে আরেকজন সই করে তুলে নিয়েছেন সম্মানি। কখনো প্রধান অতিথি, কখনো বিশেষ অতিথি, কর্মসূচি পরিচালক কিংবা প্রশিক্ষক হিসেবে নাম লিখিয়ে অন্যদের সইয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (পার্ট-২) বিধি ৭১ মোতাবেক ৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বের জন্য ভ্রমণ ভাতা প্রাপ্য নয়। অথচ প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার নিজ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিয়েও তুলে নিয়েছেন ভ্রমণ ভাতা। জাল সই ও ভ্রমণ ভাতা বাবদ তিন কোটি ১৪ লাখ ৯২ হাজার ২৮৮ টাকা তছরুপ করার সত্যতা মিলেছে অডিট প্রতিবেদনে।
জলে গেছে কনসালট্যান্ট ফি, শেষ হয়নি কেনাকাটা
প্রকল্পে কনসালট্যান্ট নিয়োগের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭২ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান কাজও করে। ১৮ মাস ২০ দিন কাজ করায় ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকা সম্মানি পরিশোধ করা হয়। সম্মানি বাবদ টাকা খরচ হলেও তা কোনো কাজে আসেনি বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>থাকছে না জিপিএ-নম্বর, আসছে চিহ্নভিত্তিক মূল্যায়ন
এতে বলা হয়েছে, ডিপিপির ক্লজ-৯ অনুযায়ী প্রকিউরমেন্ট কনসালট্যান্টের মেয়াদকালে প্রকল্পের উপকরণ কেনার জন্য বরাদ্দ ছিল ৮৫৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অথচ সাড়ে ১৮ মাসে মাত্র ৪৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। নির্ধারিত কেনাকাটা শেষ না হওয়ায় কনসালট্যান্টকে যে টাকা দেওয়া হয়েছে, তা পুরোটাই প্রকল্পের অপচয়।
প্রথম পর্যায়ে প্রস্তুত করা একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম/সংগৃহীত
ভুয়া ভাউচার-বাড়তি উপকরণে অর্ধকোটি টাকা অপচয়ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষকদের সনদ দেওয়া হয়। অডিটে উঠে এসেছে, বেসিক টিচার্স ট্রেনিং কোর্সে ম্যানুয়াল এক হাজার ৭০৯টি, হেড অব ইনস্টিটিউট ট্রেনিংয়ের (এইচআইটি) ৬৬০টি এবং কোর্সের দুই হাজার ১৯০টি সনদ পড়ে রয়েছে। অথচ এগুলো কিনতে গুনতে হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রামের দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নাশতা, খাবার ও প্রশিক্ষণ উপকরণ কেনাকাটায় ভুয়া ভাউচারও ব্যবহার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। এগুলোসহ কেনা উপকরণ আনতে পরিবহন খরচ, বিবিধ খাতে খরচ দেখিয়ে মোট ৫৮ লাখ ২৫ হাজার ৯৬১ টাকা অনিয়ম করা হয়েছে বলে অডিট প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জবাব মেলেনি এখনো, নিষ্পত্তি না হলে আইনগত ব্যবস্থাশিক্ষা অডিট অধিদপ্তর প্রতিবেদন পাঠিয়ে আপত্তিগুলোর ব্যাপারে মাউশিকে জবাব দেওয়ার অনুরোধ করেছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে জবাব চাওয়া হলেও এখনো তা পায়নি অধিদপ্তর। অন্যদিকে মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন সম্প্রতি। আপত্তিগুলো নিষ্পত্তিতে কাজ চলছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের পরিচালক আমীমুল এহসান কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পটির নিরীক্ষা (অডিট) শুরু হয়। আমাদের একটি টিম দীর্ঘসময় এটা নিয়ে কাজ করেছে। নিরীক্ষায় যা উঠে এসেছে, তার কারণ, প্রভাব ও সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেটি আমরা গত ২০ আগস্ট মাউশিতে পাঠিয়েছি। এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ হাতে পেয়েছে কবে, তা জানি না। আমাদের অনুরোধ ছিল- প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর যে নিরীক্ষা আপত্তিগুলো রয়েছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে যাতে সেগুলোর জবাব দেওয়া হয়। আমরা এখনো (২ অক্টোবর) জবাব পাইনি।’
শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের অডিট প্রতিবেদন সম্প্রতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মাউশির যুগ্ম-সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘খুব বেশি দিন হয়নি। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। আপত্তিগুলোর কোথায়, কার সংশ্লিষ্টতা তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। নিয়ম মেনে এগুলোর জবাব দেবেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘জবাব পাওয়ার পর আমরা নিষ্পত্তির জন্য তিন পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকি। সেখানেই সাধারণত নিষ্পত্তিটা হয়ে যায়। যদি সেখানেও নিষ্পত্তি না হয়, তখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া তো কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে এ নিয়ম বা প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অনিয়ম-অপচয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ১০ সুপারিশ
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সরকার অনেক দূর এগোলেও এখনো প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। হাতেগোনা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এখনো মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন সম্ভব হয়নি। আবার যেখানে মাল্টিমিডিয়া বা ডিজিটাল ক্লাসরুম আছে, সেখানে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অনিয়মে জড়িতদের ছাড় না দেওয়ার সুপারিশ করেছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। অডিট প্রতিবেদনে উঠে আসা ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হলো-
>> প্রকল্পের অর্থ অপচয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
>> অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য করা এবং জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
>> বিধি-বহির্ভূতভাবে প্রদত্ত অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করা আবশ্যক।
>> ক্রয়-প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রথম পর্যায়ে প্রস্তুত করা একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম/সংগৃহীত
>> নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণ চিহ্নিতকরণ এবং এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।
>> প্রশিক্ষণ ভেন্যুসমূহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রশিক্ষণ উপকরণ ক্রয় এবং যথাযথসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
>> নির্ধারিত সময়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও স্মার্ট ক্লাসরুম না হওয়ার কারণ চিহ্নিতকরণ এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
>> শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাঠদান সহায়ক কনটেন্ট এবং সমন্বিত সফটওয়্যার প্রস্তুত না হওয়ার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ ও সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।
>> প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান শ্রেণি শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার করার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ আবশ্যক।
>> এসডিজি-৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ডিপিপিতে নির্ধারিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।
এএএইচ/এএসএ/এএসএম