অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে।
Advertisement
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যেভাবে হামলা চালিয়েছে তাতে কতটুকু অবাক হয়েছেন?
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আমি বেশ কয়েকটি কারণে একেবারেই অবাক হইনি। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত এমন যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছিল। প্রতিদিনই সেখানে মানুষ মরছিল। নারী-শিশুরা বেশি মরছিল। আপনি গাজা বা পশ্চিম তীরকে বড় ধরনের একটি জেলখানা বলতে পারেন। আজ বিশ্বের যারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, এটাই হচ্ছে বড় ট্র্যাজেডি।
Advertisement
আরও পড়ুন>> হামাসের হাতে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র?
বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল মানুষ হত্যা করছে। অথচ বিশ্ব মোড়লরা সেখানে নিশ্চুপ। আজ ইসরায়েলে মানুষ মরছে বলে হৈ-চৈ পড়ে গেছে। তবে কোনো মৃত্যুই কাম্য হতে পারে না।
‘আজ না হয় কাল ইসরায়েলকে পিছু হটতেই হবে। মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন আগের অবস্থায় নেই। তুরস্ক এখন বড় ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। ইরান, সৌদি আরব, এমনকি আরব আমিরাতও এখন শক্তিশালী রাষ্ট্র। এগুলো তো এখন বিবেচনায় আনতে হবে’
ফিলিস্তিনের ভূমি জোর করে দখল করেছে ইসরায়েল। মানুষ মারছে। পশ্চিমারা তখন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। মানুষের মনুষ্যত্ববোধ যে কোথায়! তারা নিয়মের কথা বলছেন, গণতন্ত্রের কথা বলছেন তবে সেটা পক্ষপাতদুষ্ট।
Advertisement
আমি অবাক হইনি এ কারণে যে ফিলিস্তিনিদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তারা এখন প্রতিরোধ করবেই। ফিলিস্তিনের শিশুরাও এখন যোদ্ধা। এরা এখন যুদ্ধ করার জন্য তৈরি।
জাগো নিউজ: খুব অল্প সময়ে পাঁচ হাজারের মতো রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরায়েলের কঠিন নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে এমন হামলার ঘটনা বিস্ময় কি না?
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: এখানেই সন্দেহ তৈরি করে। ইসরায়েলের গোয়েন্দারা ফেল করার কথা নয়। ইসরায়েলের কাছে এদিন উৎসবের ছিল। বাড়তি নিরাপত্তা থাকার কথা। তাহলে কীভাবে সম্ভব হলো! হয়তো অন্য হিসাবও আছে। কারণ ইসরায়েলের মধ্যেও বড় আকারের অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনমত গঠন হয়েছে ব্যাপকহারে। ইসরায়েলের মধ্যেই প্রো-ফিলিস্তিনি কাঠামো তৈরি হচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবে জুলুম চলতে পারে না। এটি কোনো ধর্মের মানুষ মানতে পারে না। ইহুদিদের অনেকেই এ বর্বরতা সমর্থন করে না। এসব বিষয় পশ্চিমা মিডিয়া তুলে আনে না। আমাদের মিডিয়া তো খবর রাখার কথাই না।
আরও পড়ুন>> ‘দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস’
ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে যে খোদ জিউসরাই ক্ষুব্ধ তা থামানো দরকার মনে করছে ইসরায়েল সরকার। আমার কাছে মনে হয়েছে সব জেনেও কিছুটা চুপ থেকেছে ইসরায়েল।
‘বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল মানুষ হত্যা করছে। অথচ বিশ্ব মোড়লরা সেখানে নিশ্চুপ। আজ ইসরায়েলে মানুষ মরছে বলছে বলে হৈ-চৈ পড়ে গেছে। তবে কোনো মৃত্যুই কাম্য হতে পারে না’
জাগো নিউজ: কিন্তু এতে নেতানিয়াহুর সরকার আরও বিপর্যয়ে পড়তে পারে?
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আমার কাছে তা মনে হয় না। নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বৈধতা পেয়েছে। পশ্চিমাদের সমর্থন পাচ্ছে। এটি তার দরকার ছিল।
জাগো নিউজ: তাতে শেষ বিচারে ইসরায়েল স্থির থাকতে পারবে? নাকি পিছু হটবে?
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: ‘এনাফ ইজ এনাফ’। একটি ঔপনিবেশক সিস্টেমকে তো থামাতে হবে। পশ্চিমারা এই সত্য কেন বুঝতে পারছে না, তা জানি না। ইউক্রেনের জন্য গোটা পৃথিবী দরদ দেখালো। আমরা নিজেরাও ঝামেলায় পড়লাম।
আরও পড়ুন>> ‘ফিলিস্তিন ইউক্রেন নয়, হস্তক্ষেপ করলেই পাল্টা হামলা’
ফিলিস্তিনিরা বারবার শান্তির কথা বলছে। তারা দুই রাষ্ট্র, দুই জাতি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এটি পশ্চিমারা করছে না। এই শর্ত মানলে জিউসরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। কারণ বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে ভূমি দখল করেছে। ইসরায়েলের দখলবাজ কাঠামো না ভাঙলে সেখানে কখনই শান্তি আসবে না।
‘ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে যে খোদ জিউসরাই ক্ষুব্ধ তা থামানো দরকার মনে করছে ইসরায়েল সরকার। আমার কাছে মনে হয়েছে সব জেনেও কিছুটা চুপ থেকেছে ইসরায়েল’
জাগো নিউজ: এই কাঠামো ভাঙবে? সম্ভব?
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আজ না হয় কাল ইসরায়েলকে পিছু হটতেই হবে। মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন আগের অবস্থায় নেই। তুরস্ক এখন বড় ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। ইরান, সৌদি আরব, এমনকি আরব আমিরাতও এখন শক্তিশালী রাষ্ট্র। এগুলো তো এখন বিবেচনায় আনতে হবে।
আপনি সারা বিশ্বে শান্তির বাণী দিয়ে বেড়াচ্ছেন আর ফিলিস্তিনে নীরব থাকছেন, তা তো হতে পারে না। ফিলিস্তিনিদের নিজেদের জায়গা জিউসরা দখল করে নিচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা আজ উদ্বাস্তু। আন্তর্জাতিক সব আইন লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল। এ কারণেই ইসরায়েলকে একদিন সরে যেতেই হবে।
জাগো নিউজ: সরে যাওয়া মানে তো অস্তিত্ব বিলীনেরও প্রশ্ন আসে। কারণ ইসরায়েল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা নিয়েই তো প্রশ্ন আছে।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: এই প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক। সোভিয়েত ইউনিয়নে এখনো একটি এলাকা আছে যেখানে জিউসরা বসবাস করছেন। তার মানে ইসরায়েলই একমাত্র রাষ্ট্র যেখানে ইহুদিরা বাস করেন। ইহুদিদের জন্য লেনিন এমন একটি কাঠামো তৈরি করেছিলেন। মূলত ইহুদিদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে ইউরোপ। এর সমাধান ইউরোপকেই করতে হবে। জার্মানির মধ্যেই ইহুদিদের বসবাস করার নিশ্চয়তা রাখার কথা ছিল। ইউরোপ তার নিজের সমস্যা মধ্যপ্রোচ্যে ঠেলে দিয়েছে।
তবে আমি মনে করি না গাজা বা পশ্চিম তীর থেকে চলে গেলেই ইসরায়েল বিলীন হয়ে যাবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিতেই হবে।
এএসএস/এএসএ/এএসএম