তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ- ৪৯ রানের মধ্যেই ৪জন সেরা ব্যাটারকে হারিয়ে বসেছে বাংলাদেশ। ৩৬৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কত বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়, সে শঙ্কাই দেখা দিয়েছিলো বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখার পর।
Advertisement
তবে টানা চার উইকেট পড়ে গেলেও একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করছেন ওপেনার লিটন দাস। তার সঙ্গে জুটি বেধে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম।
এরই মধ্যে লিটন দাস হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেছেন। ক্যারিয়ারের ১০ম হাফ সেঞ্চুরি তিনি পূরণ করেছেন ৩৮ বল খেলে। ৭টি বাউন্ডারি এবং একটি ছক্কার মার মেরে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় বাংলাদেশের রান ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১১৬। ৬৩ বলে ৭৪ রানে ব্যাট করছেন লিটন দাস এবং ৩৮ বলে ২৯ রান নিয়ে ব্যাট করছেন মুশফিকুর রহিম।
Advertisement
এর আগে যে পিচে মালান-রুটরা রীতিমত স্টিমরোলার চালালেন বাংলাদেশের ওপর, সেই পিচে দাঁড়াতেই পারছিলেন না টাইগার ব্যাটাররা। ৩৬৫ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের। এরপর ৪৯ রানে হারায় ৪র্থ উইকেট।
ক্রিস ওকসের করা প্রথম ওভারে লিটন দাস টানা তিন বাউন্ডারি হাঁকালে নড়েচড়ে বসেছিলেন টাইগার সমর্থকরা। কিন্তু পরের ওভারেই সেই ঘোর ভাঙলো।
রিসি টপলে টানা দুই বলে সাজঘরে ফিরিয়ে দিলেন তানজিদ তামিম আর নাজমুল হোসেন শান্তকে। তামিম দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন ১ করে, পরের বলে শান্ত (০) ড্রাইভ করে পয়েন্টে ধরা পড়েন লিভিংস্টোনের হাতে। এরপর সাকিব আল হাসানকেও (৯ বলে ১) বোল্ড করেছেন টপলে।
এর আগে একটা সময় মনে হচ্ছিল, অনায়াসে চারশ পার হয়ে যাবে ইংল্যান্ডের। তবে ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংলিশদের ওতটা রান তুলতে দেয়নি বাংলাদেশ।
Advertisement
৪০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ২৯৮ ছিল ইংল্যান্ডের। টাইগারদের শেষের দিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পেরেছে মোটে ৬৬।
সবমিলিয়ে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানে থেমেছে ইংল্যান্ডের ইনিংস। ফলে জিততে হলে ৩৬৫ রানের কঠিন এক লক্ষ্য পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে।
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ইংল্যান্ডকে প্রথমে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
কোনো চমক নয়। দুই প্রান্ত দিয়ে পেস দিয়েই আক্রমণ শুরু করেন সাকিব। মোস্তাফিজুর রহমান আর তাসকিন আহমেদ প্রথম ৪ ওভারে দেন ১৫ রান।
তবে পঞ্চম ওভার এসে হাত খুলেন ডেভিড মালান। টানা দুই বলে মোস্তাফিজকে চার আর ছক্কা হাঁকিয়ে রান বাড়িয়ে নেন এই ওপেনার।
মোস্তাফিজকে তার পরের ওভারে ফের টানা দুই বলে ছক্কা আর চার হাঁকান মালান। তার সঙ্গে তাল মেলাতে চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টোও। ফলে ৪৯ বলেই জুটিতে ফিফটি পূরণ করে ফেলেন তারা। ১০০ ছুঁতে লাগে ৯৩ বল।
৩৯ বলে ফিফটি পূরণ করেন মালান। বেয়ারস্টো ছিলেন তার তুলনায় একটু ধীরগতির। তার পঞ্চাশ ছুঁতে লাগে ৫৪ বল।
কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। অবশেষে ইনিংসের ১৮তম ওভারে ওপেনিং জুটিটি ভাঙেন সাকিব। ৫৯ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৫২ রান করা বেয়ারস্টোকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন টাইগার অধিনায়ক। ১১৫ রানে আসে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি থেকে।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে আরেকটি বড় জুটি গড়ে ফেলে ইংলিশরা। ১১৭ বলেই ১৫১ রান তুলে ফেলেন জো রুট আর মালান। ৯৩ বলে সেঞ্চুরি করেন মালান। অবশেষে মালানকে বোল্ড করে এই জুটিটি ভাঙেন শেখ মেহেদি।
১০৭ বলে ১৪০ রান। ১৬ চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা। ডেভিড মালানের ক্যারিয়ারে এমন দিন আর আসেনি। বাংলাদেশকে পেয়ে নিজের ক্যারিয়ারসেরা ওয়ানডে ইনিংসটাই খেলে ফেললেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এর আগে তার সেরা ইনিংস ছিল ১৩৪ রানের।
এরপর ৩৯তম ওভারে শরিফুল ইসলাম তুলে নেন জস বাটলারকে। ইনসাইডেজ হয়ে স্টাম্প হারানোর আগে ১০ বলেই ২০ রানের ছোট এক ঝড় তুলে দিয়ে যান ইংলিশ অধিনায়ক।
নিজের পরের ওভারে এসে হ্যাটট্রিকের সুযোগও তৈরি করেন শরিফুল। পরপর দুই বলে তিনি সাজঘরে ফেরান জো রুট আর লিয়াম লিভিংস্টোনকে।
রুট চালিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আকাশে, মুশফিক সহজেই গ্লাভসবন্দী করেন সে ক্যাচ। ৬৮ বলে ৮২ রানের ইনিংসে ৮টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান ইংলিশ এই তারকা ব্যাটার।
৪২তম ওভারের শেষ দুই বলে দুই উইকেট। শরিফুল ইসলামের সুযোগ ছিল নিজের পরের ওভারে এসে হ্যাটট্রিক করার। হলো না।
আরও একবার টানা দুই বলে দুই উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাঁহাতি এই পেসারকে। ৪৪তম ওভারের প্রথম বলটি স্লোয়ার করেছিলেন শরিফুল, স্যাম কারান লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে তুলে নেন দুই রান।
এরপর হ্যারি ব্রুক (১৫ বলে ২০), স্যাম কারান (১৫ বলে ১১), আদিল রশিদকে (৭ বলে ১১) থামান শেখ মেহেদি। তাসকিন আউট করেন ক্রিস ওকসকে (১১ বলে ১৪)।
৮ ওভারে ৭১ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নেন শেখ মেহেদি। ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৩ উইকেট শরিফুলের। তাসকিন ৬ ওভারে ৩৮ রানে একটি এবং সাকিব ১০ ওভারে ৫৮ রানে নেন একটি উইকেট। ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
আইএইচএস/