সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট ও ক্লাসরুমে পালিত হয়েছে কনফুসিয়াস দিবস। ২৭ সেপ্টেম্বরকে ‘বিশ্ব কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে এইদিনটি পালিত হয়ে আসছে।
Advertisement
কনফুসিয়াস নামটি অনেকের কাছে এখন বেশ পরিচিত। তবে যারা এখনো জানেন না তাদের বলছি, কনফুসিয়াস হচ্ছেন চীনের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খ্যাতিমান, শ্রদ্ধেয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার প্রকৃত নাম খোং ফুচি। তাকে খোংচি বা খোং ছিউ নামে সম্ভাষণ করা হয়। রোমান ইতিহাসবিদরা তাকে কনফুসিয়াস নামে অভিহিত করায় চীনের বাইরে তিনি এই নামে পরিচিতি পান।
কনফুসিয়াসের দর্শন হচ্ছে নীতিশিক্ষাভিত্তিক। তিনি মনে করতেন শিক্ষার ভিত্তি হলো নীতিজ্ঞান। জীবনের সবক্ষেত্রে সুনীতি ও সুআচরণ মেনে চলা, সবার কল্যাণ সাধন করাই হলো মানবজীবনের মহান ব্রত।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় যেসব স্থান
Advertisement
কনফুসিয়াসের জন্ম ৫৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ২৮ সেপ্টেম্বর চীনের ছুফু শহরে, যা বর্তমানে শানতোং প্রদেশের অন্তর্গত। সে সময় শহরটি চৌ রাজবংশের শাসনাধীন লু সামন্ত রাজ্যের ছিল। তার বাবা খোং হ্য অভিজাত শিক্ষিত পরিবারের সন্তান ছিলেন। মায়ের নাম ছিল ইয়ান চ্যংচাই।
মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে মায়ের কাছেই বড় হতে থাকেন তিনি। বাবার মৃত্যুর ফলে বেশ দারিদ্র্যের মধ্যেই শৈশব কাটে তার। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় তরুণী ছিকুয়ানের সঙ্গে। ২৩ বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হলে তার জীবনসংগ্রাম বেশ তীব্র হয়ে ওঠে। কিশোর বয়স থেকে নানা রকম কাজ করেছেন খোংচি। যে পেশাতেই থাকুন না কেন, তিনি সবসময়েই লেখাপড়া করতেন এবং তার কাছে মানুষ আসতো বিদ্যা অর্জনের জন্য।
একবার লু প্রদেশের শাসক চিচি তার পাণ্ডিত্যের কথা জানতে পেরে তাকে রাজদরবারে আমন্ত্রণ জানান। তার পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি প্রথমে তাকে হিসাবরক্ষক এবং পরে আরও বড় পদ দেন। ৫২ বছর বয়সে লু প্রদেশের প্রধান আইন রক্ষক হন খোংচি। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘মানুষের মাঝে যদি নৈতিক চরিত্রের উন্নতি না ঘটে, শুধুমাত্র আইন দিয়ে মানুষকে সংযত রাখা সম্ভব নয়’। তাই কনফুসিয়াস নিজেই আইন প্রণয়নকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে নীতিবোধ জাগাতে নানা উপদেশ দিতে থাকেন।
অল্প কিছুদিনেই এর সুফল দেখা দিল রাজ্যে। সমগ্র চীনের মধ্যে লু রাজ্য ছিল একমাত্র রাজ্য যেখানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন হতো না।
Advertisement
তবে নীতি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি অনেক শক্তিশালী শত্রু সৃষ্টি করেছিলেন। অনেক সময় শাসকের বিরাগভাজনও হন। একসময় তিনি লু রাজ্য ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচ খেয়ে বিশ্বরেকর্ড
৬৮ বছর বয়সে খোংচি তার জন্মভূমি লু রাজ্যে ফিরে আসেন। জীবনের শেষ কয়েকটা বছর তিনি ৭০ থেকে ৭২ জন শিষ্যকে উপদেশ দেন। তার প্রিয় পুত্র এবং প্রিয় কয়েকজন শিষ্যের মৃত্যুতে শোকার্ত হওয়ায় তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। ৭১ কিংবা ৭২ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। ছুফু শহরের খোং লিন সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাহিত করা হয়।
কনফুসিয়াসকে মানবসভ্যতার অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাগুরু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি যে শিক্ষা ও বাণী মানবজাতিকে দিয়েছিলেন তা অমরত্ব পেয়েছে। তার একটি কবিতা পাঠকদের জন্য দিচ্ছি-
একটি অভিযোগতিনি আমাদের একটি প্রশস্ত বাড়িতে রাখলেনএবং আমাদের ভাড়া ছিল প্রচুর।কিন্তু এখন প্রতিটি আহার হয় অতি সংক্ষেপেবাড়তি কোনো খাদ্যই নেই।হায়রে! আফসোস, এই ভালো মানুষযেভাবে জীবন শুরু করেছিলেনসেভাবে চলতে পারেননি।
কনফুসিয়াস চীনা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব রেখেছেন। আজও কনফুসিয়াসের নীতিশিক্ষা ও দর্শন চীনের শিক্ষা সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এবং কনফুসিয়াস ক্লাসরুম। ২০০৪ সালে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট তাদের কর্মসূচি শুরু করে। চীন বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮০০-এর বেশি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছে।
কেএসকে/এমএস